এই পাঠে আমরা জানবো মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহ-মৌলিক সংখ্যা ধারণা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো, মডিউল-০৩; নিবন্ধ-০৩, মৌলিক সংখ্যা ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহমৌলিক সংখ্যা মনযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সবাই জানাতে শেয়ার করে দিন।
গতপর্বে আলোচনা করেছিলাম দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণনা রীতির পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে। নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহ-মৌলিক সংখ্যা ধারণা জানানো হল আজ।
মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহ-মৌলিক সংখ্যা
এই আলোচনায় যে বিষয়গুলোতে আলোকপাত করা হবে সেগুলো হল-
ক) মৌলিক সংখ্যা কী
খ) যৌগিক সংখ্যা কী
গ) সহমৌলিক সংখ্যা কী
মৌলিক সংখ্যা ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহমৌলিক সংখ্যা” বিষয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যার ধারণা ষষ্ঠ শ্রেণিতেই প্রথম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন, নিচের চিত্রে মৌলিক সংখ্যার ধারণা স্পষ্ট করা হয়েছে।
এখানে এক কাপ চা এর উদাহরণ দিয়ে “মৌলিক” শব্দটি কী তা বোঝানো হয়েছে। এরপর মৌলিক শব্দের ধারণা থেকে মৌলিক সংখ্যার ধারণা দেওয়া হয়েছে।
মৌলিক সংখ্যা কীভাবে নির্ণয় করতে হয়, অর্থাৎ কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে সংখ্যাটি
মৌলিক সংখ্যা হবে তা আলোচনা করা হয়েছে।
তাহলে এখান থেকে আমরা পেলাম- ১ থেকে বড় যেসব সংখ্যাকে ১ এবং ঐ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় সেটিই হলো মৌলিক সংখ্যা।
এবং মৌলিক সংখ্যার অবশ্যই দুইটি উৎপাদক থাকবে,
উৎপাদক দুইটি হবে ১ এবং সেই সংখ্যাটি নিজে এরপর কয়েকটি সংখ্যাকে পাশাপাশি রেখে সেগুলো মৌলিক না যৌগিক তা নির্ণয় করে দেখানো হয়েছে। এবং সহমৌলিক সংখ্যার ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷
সম্পূরক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যার আরও ভিডিও এবং অনুশীলনী এই মডিউলের শেষে সংযোজন করা রয়েছে। আপনি চাইলেই প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো দেখে নিতে পারেন বা অনুশীলনীগুলো চর্চা করতে পারেন।
শিখন-শেখানো : মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহ-মৌলিক সংখ্যা ধারণা
এতক্ষণের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে যদি একটি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় সেটি কীভাবে করা যেতে পারে সে সম্পর্কেই এই অংশে আলোচনা করা হবে। নিচের ছকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাক্রমে নির্দিষ্টভাবে এই মৌলিক, যৌগিক ও সহমৌলিক সংখ্যা- এর শিখনফল রয়েছে।
এখানে শিখনফল দেওয়া আছে যে, পাঠ শেষে “শিক্ষার্থীরা মৌলিক সংখ্যা, যৌগিক সংখ্যা ও সহমৌলিক সংখ্যা চিহ্নিত করতে পারবে” এবং শিক্ষাক্রমে “শিখন – শেখানো নির্দেশনা”য় বলা হয়েছে যে,
“শিক্ষার্থীরা বোর্ডে কয়েকটি সংখ্যা লিখে তা থেকে মৌলিক সংখ্যা ও যৌগিক সংখ্যা শনাক্ত করবে। কোন কোন সংখ্যা পরস্পর সহমৌলিক তা নির্ণয় করতে শিক্ষক সহযোগিতা করবেন। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ধারণা পরিষ্কার করবেন”।
অর্থাৎ এই শিখন- শেখানো নির্দেশনা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত এ শিখনফল অর্জন করতে শিক্ষক কী কী উপায়ে শ্রেণিকক্ষে এই বিষয় সম্পর্কে পূর্বজ্ঞান যাচাই করবেন, পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পূর্বজ্ঞান যাচাইয়ের জন্য কী কী করা যেতে পারে তা উল্লেখ করা হল।
মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহ-মৌলিক সংখ্যা ধারণার পূর্বজ্ঞান যাচাই
বিভিন্ন উদাহরণ ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান যাচাই করা যেতে পারে, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বাস্তব জীবনের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কোন ঘটনা, বিষয়, উদাহরণ ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীদের এভাবে বলা যেতে পারে-
ক. মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা কী জানে তা জিজ্ঞেস করা,
খ. বোর্ডে ১ বা অন্য কোন অঙ্ক লেখে জিজ্ঞেস করা অঙ্কটি মৌলিক নাকি যৌগিক,
গ. দুইটি সহমৌলিক সংখ্যা লেখে এদের সম্পর্ক কী তা জিজ্ঞেস করা,
ঘ. শিক্ষার্থীরা ১ থেকে ১০ এর মধ্যে মৌলিক সংখ্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারছে কিনা তা দেখা;
এরকম নিত্যদিনের বিভিন্ন ঘটনা বা উদাহরণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান যাচাই করা যেতে পারে।
পাঠদান কার্যক্রম
এরপর শ্রেণিকক্ষে ‘মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহমৌলিক সংখ্যা’ নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে এবং এদের মধ্যকার সম্পর্ক কী, কীভাবে এটি কাজ করে সেটি ব্যাখ্যা করে বলা যেতে পারে।
সমগ্র পাঠে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে, শিক্ষক নিচের ছবিটি দেখিয়ে মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যার ধারণা দিতে পারেন।
চিত্রে একটি দেয়াল দেখা যাচ্ছে। এটি ভাঙলে পাওয়া যাবে ইট, সিমেন্ট এবং বালু। আবার একটি ইট ভাঙলে পাওয়া যাবে ইটের সুরকি। তাহলে ইট ভাঙলে ইটের ভাঙা অংশই পাওয়া যাবে।
নতুন কিছু পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ শিক্ষক তুলনা করে বলতে পারেন যে, এই দেয়ালটির ক্ষেত্রে ইট হল দেয়ালের মৌলিক অংশ। আর দেয়ালটি যে কয়েকটি উপাদান নিয়ে গঠিত, তাই এটি যৌগিক অংশ।
তবে, এটি একটি উদাহরণ মাত্র। শিক্ষক তার সুবিধা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বোধগম্য পাঠ সংশ্লিষ্ট যেকোনো বাস্তব উদাহরণ দিয়েই ব্যাখ্যা করতে পারেন।
এভাবে মৌলিক ও যৌগিক ধারণা থেকে মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যার ধারণায় যাওয়া যেতে পারে। এরপর সহমৌলিক সংখ্যা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
শিক্ষা উপকরণ
কয়েক ধরণের শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে এই পাঠটি উপস্থাপন করা যেতে পারে। যেমন-
১। পোস্টার পেপারে ১-১০০ পর্যন্ত সংখ্যার একটি সংখ্যা চার্ট তৈরি করা যেতে পারে, একটি দলকে চার্টটিতে মৌলিক সংখ্যা এবং অন্য দলকে চার্টে যৌগিক সংখ্যা চিহ্নিত করতে বলা যেতে পারে৷
২। শ্রেণিকক্ষে কিংবা আশেপাশে আছে এমন কোন উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা থেকে সহজেই শিক্ষার্থী মৌলিক-যৌগিক বিষয়টি বুঝতে পারে। যেমন- চা অথবা দেয়ালের উদাহরণ।
৩। বোর্ড, খাতা কলমের ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পোস্টার পেপারে লিখে আনা ছকটি বোর্ডেও লেখা যেতে পারে।
৪। পাঠসংশ্লিষ্ট কোন ভিডিও প্রদর্শন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শিক্ষক সম্পূর্ণ ভিডিও বা বিশেষ কোন অংশ ব্যাখ্যা করে আলোচনা করতে পারেন।
মূল্যায়ন
এভাবে ধাপে ধাপে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এই তিনটি ধারণার সাথে পরিচিত করতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখনফল অর্জন হয়েছে কি না তা মূল্যায়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে পারেন।
এক্ষেত্রে একজন শিক্ষক কী কী উপায়ে এই পাঠ মূল্যায়ন করতে পারেন, তা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হল।
আমাদের শিক্ষাক্রমে এই বিষয়ে “মূল্যায়ন নির্দেশনা”- লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সেখানে আছে যে শিক্ষক বাড়ির কাজ ও শ্রেণির কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করবেন।
ছক উপস্থাপন করার সময় শিক্ষার্থীদের উপস্থাপন কৌশল মূল্যায়ন করবেন। শ্রেণি অভিক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করবেন।নির্ধারিত মানদণ্ডের সাহায্যে দলগত কাজ মূল্যায়ন করবেন। অর্থাৎ একজন শিক্ষক নানাভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে পারেন। যেমন –
১। শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন-
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে পারেন। সেটি হতে পারে –
ক. প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে মূল্যায়ন
খ. বোর্ডে কিংবা খাতায় লেখার মাধ্যমে মূল্যায়ন।
গ. শিক্ষার্থীদের দলগত/ একক কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন।
২। বাড়ির কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন-
বাড়ির কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা যেতে পারে। বাড়ির কাজ এমন কিছু দিতে হবে যেন তা শিক্ষার্থীকে চিন্তা করে উত্তর লিখতে হয়৷
৩। শ্রেণি অভিক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন-
কোন বিষয়/অধ্যায় আলোচনা শেষে পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। যেমন, মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহমৌলিক সংখ্যা পাঠদানে মূল্যায়ন করার কয়েকটি উপায় হতে পারে এরকম-
একক কাজঃ
শিক্ষার্থীদের কয়েকটি সহমৌলিক সংখ্যা নিজ নিজ খাতায় লিখতে বলা মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যার পার্থক্য জিজ্ঞেস করা;
দলগত কাজঃ
১-১০০ পর্যন্ত সংখ্যার কয়েকটি চার্ট তৈরি করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের একটি দলকে একটি চার্ট দিয়ে সেখান থেকে মৌলিক সংখ্যা এবং যৌগিক সংখ্যা চিহ্নিত করতে বলা যেতে পারে।
প্রতি দল থেকে কিছু শিক্ষার্থীকে সামনে ডেকে তাদের দলের প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করতে বলা যেতে পারে, যেমন, তারা মোট কয়টি মৌলিক বা যৌগিক সংখ্যা পেয়েছে তা জিজ্ঞেস করা যেতে পারে।
প্রিয় পাঠক, মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহ-মৌলিক সংখ্যা ধারণা আর্টিকেলটি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য প্রণীত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মুক্তপাঠ প্লাটফর্মে রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো (ষষ্ঠ শ্রেণি) অনলাইন কোর্স থেকে সংগৃহিত। এটি শুধুমাত্র আপনাদের এই কোর্সটি সহজে বোঝার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার কোনো আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি চাইলে আমাদের ফেসবুক পেইজে মেসেজ এর মাধ্যমে আপনার সমস্যাটি জানাতে পারেন।
নিচের ভিডিওতে মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা এবং সহ-মৌলিক সংখ্যা ধারণা নিন
মৌলিক এবং যৌগিক সংখ্যা চিহ্নিত করা [Recognizing prime and composite numbers]
মৌলিক এবং যৌগিক সংখ্যা চিহ্নিত করা [Recognizing prime and composite numbers]
প্রশ্ন-১: ” ১ ” কী?
- মৌলিক সংখ্যা
- সহমৌলিক সংখ্যা
- যৌগিক সংখ্যা
- কোনটিই নয়
প্রশ্ন-২: ভিডিওতে আলোচনাকৃত ধারণা অনুযায়ী নিচের কোন উপাদানটি মৌলিক?
- ইটের দেয়াল
- দুধ চা
- ইট
- শরবত
প্রশ্ন-৩: নিচের কোনগুলো সহমৌলিক সংখ্যা?
- ৫ ও ১৩
- ৭ ও ২১
- ১৪ ও ৩৫
- ১৫ ও ৪৫