মুসলিম সভ্যতার পতন ও সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার উত্থান

প্রিয় পাঠকগণ, আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালোই আছেন। আজ জানাবো প্রাচীন ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সিরিজ এর মুসলিম সভ্যতার পতন ও সুদভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থার উত্থান নিয়ে। এই আর্টিকেল আপনাকে প্রাচীন যুগে ইসলামি অর্থনীতি বা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ইসলামী সভ্যতা কেন পতন হয়েছিল এবং সুদ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার প্রবর্তন সংক্রান্ত ধারনা দিবে।

এই নিয়মিত আয়োজনের গতপর্বে ছিল ইসলামী অর্থনৈতিক চিন্তার ক’জন দিশারী নিয়ে। আশা করছি আপনি এটি পড়েছেন এবং মুসলিম অর্থনীতি চিন্তায় যারা অবদার রেখেছেন তাদের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের মুসলিম সভ্যতার পতন ও সুদভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থার উত্থান বিষয়ে জানতে হবে। অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেন সুদ কোথা থেকে এলো এবং কে সর্বপ্রথম সুদ চালু করেছিল। এই প্রশ্নগুলোরই উত্তর জানার চেষ্টা করবো আজ।

মুসলিম সভ্যতার পতন

মধ্যযুগে পশ্চিমা দুনিয়া যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন, প্রাচ্য ছিল তখন ইসলামের আলোক-প্রভায় উদ্ভাসিত। সপ্তম শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়ে মাত্র একশ’ বছরের মধ্যে ইসলাম অর্ধ পৃথিবীতে আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও বস্তুগত উৎকর্ষের জোয়ার সৃষ্টি করেছিল। চৌদ্দ ও ষোল শতকে ইউরোপে যে রেনেসাঁ সৃষ্টি হয়, তার পেছনে ছিল মুসলিম বিশ্বের স্বর্ণযুগের সাফল্যেরই প্রেরণা।

টমাস কার্লাইল, এইচ জি ওয়েলস, এইচ ল্যামেনস, ফন ক্রেমার, জর্জ বার্নাড শ’, ফিলিপ কে হিট্টি, উইলিয়াম ড্রেপার, এডওয়ার্ড গিবন, এইচ আর গিব, আর্নল্ড টয়েনবিসহ বহুসংখ্যক পশ্চিমা পণ্ডিত এবং প্রাচ্যের এম এন রায়সহ বহু গবেষক বিশ্বসভ্যতায় ইসলামের এই অবদানের কথা স্বীকার করেছেন।

মুসলিম সভ্যতার পতন ও সুদভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থার উত্থান

তাঁদের অনেকে উল্লেখ করেছেন যে, মুসলমানদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেই ইউরোপ আধুনিক সভ্যতার নেতৃত্ব গ্রহণে সমর্থ হয় সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র লন্ডনে।

তাঁর চিন্তাকে তিনি সে যুগের সবচে আধুনিক গণমাধ্যমের সাহায্যে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। ফলে দেশে দেশে বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছিল।

অন্যদিকে শাহ ওয়ালীউল্লাহ কাজ করেছেন একটি পতনমুখী সভ্যতার রাজধানী দিল্লীতে বসে। কোন গণমাধ্যম দূরে থাক, তাঁর আশপাশে তাঁর ধারণাকে হজম করার মতো লোকেরও যথেষ্ট অভাব ছিল।

এমনকি তাঁর মূল্যবান গ্রন্থসমূহ মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর মৃত্যুর প্রায় দেড়শ’ বছর পর। শাহ ওয়ালীউল্লাহ আঠারো শতকে ইসলামী চিন্তা-চেতনার বিকাশে যে ভূমিকা পালন করেন, অনেক পরে হলেও তা উপমহাদেশের ইসলামী চিন্তা-চেতনাকে প্রভাবিত করেছে।

উপমহাদেশে ঊনিশ শতকের জিহাদ আন্দোলন, ফরায়েজী আন্দোলন, সিপাহী বিপ্লব, মুসলমানদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ইসলামী জাগরণকে তার চিন্তা পথ দেখিয়েছে।

তারই ধারাবাহিকতায় কুড়ি শতকের মধ্যভাগ থেকে ইসলামী অর্থনৈতিক চিন্তা ও ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার বিকাশে উপমহাদেশের চিন্তাবিদগণ বিশিষ্ট ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

আল্লামা হিফযুর রহমান, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী, ডক্টর ইউসুফ উদ্দীন, ডক্টর আনোয়ার ইকবাল কোরেশী, শেখ মাহমুদ আহমদ, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, ডক্টর নেজাতুল্লাহ সিদ্দিকী, প্রফেসর খুরশীদ আহমদ, ডক্টর উমর চাপরা, বিচারপতি তাক্বী উসমানীসহ উপমহাদেশীয় মনীষীগণ ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং-এর দিগন্তকে আলোকিত করেছেন।

মুসলিম সভ্যতার পতন ও সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার উত্থান

মধ্যযুগে পশ্চিমা দুনিয়া যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন, প্রাচ্য ছিল তখন ইসলামের আলোক-প্রভায় উদ্ভাসিত। সপ্তম শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়ে মাত্র একশ’ বছরের মধ্যে ইসলাম অর্ধ পৃথিবীতে আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও বস্তুগত উৎকর্ষের জোয়ার সৃষ্টি করেছিল। চৌদ্দ ও ষোল শতকে ইউরোপে যে রেনেসাঁ সৃষ্টি হয়, তার পেছনে ছিল মুসলিম বিশ্বের স্বর্ণযুগের সাফল্যেরই প্রেরণা।

টমাস কার্লাইল, এইচ জি ওয়েলস, এইচ ল্যামেনস, ফন ক্রেমার, জর্জ বার্নাড শ’, ফিলিপ কে হিট্টি, উইলিয়াম ড্রেপার, এডওয়ার্ড গিবন, এইচ আর গিব, আর্নল্ড টয়েনবিসহ বহুসংখ্যক পশ্চিমা পণ্ডিত এবং প্রাচ্যের এম এন রায়সহ বহু গবেষক বিশ্বসভ্যতায় ইসলামের এই অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের অনেকে উল্লেখ করেছেন যে, মুসলমানদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেই ইউরোপ আধুনিক সভ্যতার নেতৃত্ব গ্রহণে সমর্থ হয়।

মুসলিম সভ্যতার পতন ও সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার উত্থান
ব্যাংক সুদের বিনিময়ে লোন

মুসলমানগণ জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষা-সংস্কৃতি-সভ্যতার ক্ষেত্রে মধ্যযুগে যে উৎকর্ষ সাধন করেছিলেন, আল-কুরআন ও রাসূলুল্লাহ্-এর আদর্শ ছিল তার ভিত্তি ও প্রেরণা।

পরবর্তীতে ইসলামী সংস্কৃতি ও জীবনধারার প্রধান উৎস তথা আল কুরআনের শিক্ষার সাথে মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়।

এর ফলে উদ্ভূত নানা অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে এবং বাহ্যিক আগ্রাসনের শিকার হয়ে মুসলমানগণ সভ্যতা-সংস্কৃতি বিকাশে নেতৃত্বদানের যোগ্যতা হারান।

আদর্শচ্যুত মুসলমানদের এমনি অসংহত, ক্ষয়িষ্ণু ও বিক্ষিপ্ত অবস্থার মধ্যেই তেরো শতকের মধ্যভাগে বাগদাদ ও মধ্য এশিয়া হালাকু খানের হাতে ধ্বংস হয়।

বাগদাদের পর কর্ডোভা, দিল্লী, ইস্তাম্বুল ক্রমশ পতনের সম্মুখীন হয়। একের পর এক মুসলমানদের কেন্দ্রগুলির পতন ইসলামের পতন ছিল না। এ ছিল কুরআন-বিচ্যুত, সম্বিতহারা, দিকভ্রান্ত মুসলমানদের পতন।

চৌদ্দ ও ষোল শতকের ইউরোপীয় রেনেসাঁর পর পশ্চিমা নবোদ্ভূত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করে এবং কুরআনের প্রভাবমুক্ত বিকৃত আদর্শের প্রসার ঘটাতে সমর্থ হয়। মুসলমানগণ ইসলামের উদার বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বা উম্মাহ্-চেতনা ও ভ্রাতৃত্ববোধ হারিয়ে ফেলে ।

কুরআন মজীদে আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ ও সাবধানবাণী

“তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না…।”

সূরা আলে ইমরান : ১০৩

“তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও পরস্পর কলহ-বিবাদ কোর না; করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে…”

সূরা আনফাল : ৪৬

“তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে।”

সূরা আলে ইমরান : ১০৫

ঐক্য ও সংহতির নির্দেশ এবং বিচ্ছিন্নতা ও কলহ-বিবাদের পরিণাম সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের এসব সাবধানবাণীর পরও মুসলমানরা অনৈক্য ও আত্মবিধ্বংসী ঘরোয়া হানাহানির শিকার হন।

ভৌগোলিক জাতীয়তার ধারণা ও ইসলামপরিপন্থী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেন। ত্যাগ- তিতিক্ষা, সংগ্রাম ও সাহসের ঐতিহ্য ভুলে তারা ভোগবাদী জীবনধারায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। সর্বোপরি দেশে দেশে মুসলিম শাসকগণ সাম্রাজ্যবাদীদের হাতের পুতুলে পরিণত হন।

মুসলমানগণ ইসলামী আদর্শ অনুসরণের কারণেই একসময় সমৃদ্ধির উচ্চশিখরে আরোহণ করেছিলেন। কিন্তু আদর্শিক বিচ্যুতি তাদের পতনের পথ প্রশস্ত করে।

খিলাফতের আদর্শ ছেড়ে মুসলিম শাসকগণ রাজতন্ত্রের পথ ধরেন। এ পথে তাদের রাজনৈতিক পতন ত্বরান্বিত হয়। চিন্তার ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব নেমে আসে।

ইসলামের নৈতিক প্রেরণা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে বস্তুগত উন্নতির সকল চাবিও তাদের হাতছাড়া হয়। মুসলমানদের এ পতনযুগে তাদের চারদিকে এক নতুন সভ্যতার উত্থান ঘটে।

সে সভ্যতার লক্ষ্য, আদর্শ ও বাণী ছিল মুসলমানদের সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, জীবনবোধ, জীবনধারা ও আদর্শিক কাঠামোর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

পশ্চিমা এ নতুন জড়বাদী ও ভোগবাদী সভ্যতার সবচে’ শক্তিশালী হাতিয়ার ও শোষণযন্ত্ররূপে হাজির হলো সুদভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থা। ইহুদিরাই প্রথমে ব্যাংক ব্যবসায়ে সুদের প্রবর্তন করে। খ্রিস্টানরা গোড়াতে এর বিরোধিতা করে । কিন্তু পরে তারাও শোষণমূলক এই সুদী কারবারে জড়িয়ে পড়ে।

সুদের ক্লাসিক্যাল তত্ত্বের প্রবক্তা অ্যাডাম স্মীথ ও রিকার্ডো। তাদের মতে, সুদ হলো বিনিয়োগকৃত মূলধনের উপর নির্ধারিত হারে আয়। এই তত্ত্বে সুদের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে দেখানো হলো, জমির উপর খাজনা ধার্য করা গেলে মূলধনের উপরও সুদ থাকা উচিত।

তার বিপরীতে ইসলামী অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য হলো মূলধন বিনিয়োগ না করে শুধু টাকার উপর সুদ ধার্য করা ইনসাফের পরিপন্থী।

তাদের মতে, অর্থ বিনিয়োগ না করা পর্যন্ত এর কোন ব্যবহারিক উপযোগিতা থাকে না। অর্থ বিনিয়োগ করা হলেই এর সাথে অন্তর্নিহিত ঝুঁকির প্রশ্ন চলে আসে। তাই ঝুঁকিতে অংশগ্রহণ না করে শুধু অর্থের বাহ্যিক মূল্যের উপর অতিরিক্ত দাবি করা যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না।

ক্ল্যাসিক্যাল থিওরিতে ধরেই নেওয়া হয় যে, ঋণগ্রহীতা ঋণের টাকায় লাভবান হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এ ধারণা অবাস্তব হতে পারে। প্রত্যেক ঋণগ্রহীতাই ঋণের টাকায় মুনাফা লাভ করে না।

মৌলিক প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে ঋণের মাধ্যমে লাভের দিকটি অবান্তর। ব্যবসায়েও সব সময় লাভ হয় না। লাভ হলেও সব সময় তার পরিমাণ সমান নয় । কিন্তু লাভ হোক বা না হোক, সুদের হার নির্দিষ্ট।

লোকসান হোক কিংবা লাভ হোক, সব ক্ষেত্রে সুদ প্রায়শই অপরিবর্তিত থাকে। এজন্য এটি স্বভাব ও প্রকৃতির বিরোধী। সে কারণে তা বেইনসাফী ও যুলুমের নামান্তর।

সুদের হার সঞ্চয়ের পরিমাণ নির্ধারক হওয়ার ধারণাটিও ভুল। কেননা, সুদের হার নয়, আয়ের পরিমাণের উপরই সঞ্চয় নির্ভরশীল। এ ছাড়া, সকল সঞ্চয় বিনিয়োগ না-ও হতে পারে।

ক্লাসিক্যাল সুদতত্ত্বে মূলধনকে বাজারের অন্যান্য উপকরণের মতো বিবেচনা করা হয় এবং সরবরাহ ও চাহিদার ভিত্তিতে এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়- যা সুদের হার বলে বিবেচনা করা হয়।

এই মতবাদে সুদের হারই সঞ্চয়কে উৎসাহিত করে এবং সঞ্চয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে। জন ম্যানার্ড কীনস এই ধারণার বিরোধিতা করে বলেন, সুদের হার নয়, বরং আয়ের পরিমাণই সঞ্চয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে।

সুদের এবস্টিন্যান্স থিওরির প্রবক্তা উইলিয়াম সিনিয়র। তাঁর মতে, ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে টাকা দিয়ে নিজে ভোগে বিরত থাকে বা ত্যাগ স্বীকার করে। এ কারণে ঋণদাতাকে ঋণগ্রহীতার সুদ দেয়া উচিত। মার্শাল বলেছেন, ঋণ দিয়ে অপেক্ষায় থাকার জন্য এ সুদ।

সুদের উৎপাদনশীলতা তত্ত্বের (Productivity Theory) প্রবক্তা বহাম বেওয়ার্ক-এর মতে, মূলধনের উৎপাদন-ক্ষমতার জন্য সুদ দেয়া উচিত।

বহাম বেওয়ার্ক-এর চিন্তাধারাপ্রসূত অস্ট্রিয়ান বা ওগিয় থিওরি অনুসারে সমকালীন উৎপাদন

যা পরবর্তী উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হয় তা-ই মূলধন। সুদ হচ্ছে এই মূলধনের অন্তর্বর্তী সময়ক্ষেপণের মূল্য। ভবিষ্যতের চেয়ে বর্তমানই মানুষের অধিক পছন্দ ও ভাবনার বিষয় বলে তিনি সুদকে একটি অর্থনৈতিক প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন।

তার মতে, বর্তমান পণ্য সব সময়ই ভবিষ্যত পণ্য থেকে অগ্রাধিকার প্রাপ্য। কাজেই ভবিষ্যত পণ্যকে বর্তমানে রূপান্তরের জন্য অবশ্যই একটি ধনাত্মক সুদের হার থাকা উচিত।

উৎপাদনশীলতা তত্ত্বের বিপরীতে বলা হয়েছে, শ্রম ও ক্ষেত্র ছাড়া মূলধনের কোন একক উৎপাদন-ক্ষমতা নেই। সে কারণে মূলধনের জন্য নির্দিষ্ট হারে সুদ নির্ধরিণ অযৌক্তিক।

সুদের প্রান্তিক তত্ত্বও সুদের হার নির্ধারণ করতে অসমর্থ । বরং মূলধনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা সুদের হার দ্বারাই নির্ণীত হয়। এ থিওরিগুলোতে সুদের হার নির্ধারণের চাইতে সুদের কারণ সন্ধানে অধিক মনোযোগ দেয়া হয়েছে। তাই এগুলোকে অমুদ্রা তত্ত্ব (Non Monetary Theory) বলা হয়।

অন্যদিকে রয়েছে সুদের কয়েকটি মুদ্রা তত্ত্ব (Monetary Theory)। এসব তত্ত্বে সুদকে একটি প্রয়োজনীয় আর্থিক বিষয় মনে করা হয়। এগুলোর প্রতিপাদ্য সুদের অস্তিত্বের কারণ বা যৌক্তিকতা নির্ধারণ নয়; বরং সুদের হার নির্ধারণ।

লর্ড কীসের চিন্তাধারাপুষ্ট ঋণযোগ্য তহবিল ও তারল্য অগ্রাধিকার তত্ত্ব এ ক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য

কীস কখনও সুদকে ব্যবহারিক বিষয় বলেছেন। আবার কখনও মনস্তাত্বিক বিষয় বলেছেন।

এ দোলাচলের মধ্যে তিনি সুদের একান্ত অল্প হারের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তিনি সুদহীন অর্থব্যবস্থার সম্ভাব্যতাও স্বীকার করেছেন। অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সর্বাধিক করার উপায় হিসেবে তিনি সুদের শূন্য হারকে চিহ্নিত করেছেন।

ভিন্ন ভিন্ন আয়সম্পন্ন বিভিন্ন স্তরের মানুষের ভোগে বিরত থাকা, অপেক্ষা করা বা ত্যাগের পরিমাণ নির্ধারণ সম্ভব হয়নি বলে প্রাগ্রসর অর্থনীতিবিদদের নিকট এবস্টিন্যান্স থিওরি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

অস্ট্রিয়ান বা ওগিয় থিওরির বিপরীতে প্রাগ্রসর অর্থনীতির প্রবক্তাদের মত হচ্ছে, অধিকাংশ লোকই শিক্ষা, বার্ধক্য বা বিয়ের জন্য ভবিষ্যতের প্রয়োজনে সঞ্চয়ে উৎসাহী।

সুতরাং এ মতও ভ্রান্তির ওপর ভিত্তিশীল। এ মতের প্রবক্তাগণ সুদের হার নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন; কিন্তু সুদকে ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক বলে প্ৰমাণ করতে পারেননি।

অমুদ্রা তত্ত্ববাদে মুদ্রাতত্ত্বে সুদকে প্রয়োজনীয় আর্থিক বিষয় মনে করা হলেও এটি গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়নি। কারণ সুদের যৌক্তিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারলে তার হার নির্ধারণের প্রশ্নও আসে না। কেননা, সুদের বিষয়টিই অর্থনীতিবিদদের কাছে মীমাংসিত নয়।

যাহোক, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী চিন্তার উন্মেষযুগে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ১১৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভেনিসে প্রথম আধুনিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।

এরপর ১৪০১ সালে বার্সেলোনায় দীর্ঘ প্রায় আড়াইশ’ বছর পর প্রতিষ্ঠিত ‘ব্যাংক অব ডিপোজিট’ আধুনিক ব্যাংকের তালিকায় একটি উল্লেখযোগ্য নাম। স্বীকৃত প্ৰথম আধুনিক ব্যাংকরূপে ১৫৮৭ সালে ভেনিসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ব্যাংক ডেল্লা পিজা দ্য রিয়ালটো’

এরপর ১৬০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ডাচ আমস্টার্ডাম ব্যাংক’। এটি ইউরোপে আধুনিক ব্যাংকিং-এর মডেল হিসেবে কাজ করেছে।

প্রিয় পাঠক, iBankHub এর এই ছিল মুসলিম সভ্যতার পতন ও সুদভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থার উত্থান আয়োজন। আশা করছি এই বিষয়ে আপনার কিছুটা ধারনা হয়েছে। আপনি চাইলে ইসলামি ব্যাংকিং সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারেন। নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজটি লাইক ও ফলো করে রাখুন।

One thought on “মুসলিম সভ্যতার পতন ও সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার উত্থান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.