সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সকল ব্যাংকের জন্য ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা প্রকাশ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালা অনুসরণ করেই ব্যাংকগুলো তাদের শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ সহ সকল প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে।
বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশ্যে জারীকৃত ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া/ইজারা সংক্রান্ত নীতিমালা আমরা পাঠকদের জন্য প্রকাশ করলাম।
ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া/ইজারা সংক্রান্ত নীতিমালা
শিরোনামোক্ত বিষয়ে বিআরপিডি সার্কুলার নং-১৮/২০১২ এবং বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-৭/২০১৩, ২/২০১৫, ৯/২০১৬, ২৮/২০১৮, ১/২০১৯ ও ২৮/২০১৯ এর প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে ।
উল্লিখিত সার্কুলার ও সার্কুলার লেটারসমূহের মাধ্যমে সময়ে সময়ে তফসিলি ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত নীতিমালা/নির্দেশনা জারি করা হয়।

বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবসার প্রসার, ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত জনগণের নিকট ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া ও অধিকতর আর্থিক সেবাভুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকসমূহের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন, স্থানান্তর ও ভাড়াচুক্তি নবায়ন এবং সান্ধ্য ব্যাংকিং এর বিদ্যমান নীতিমালা নিম্নরূপভাবে প্রতিস্থাপন করা হলো:
ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা কোনো ব্যাংক নতুন শাখা স্থাপন করার পদ্ধতি ও কার্যক্রম এবং নিয়মাবলিগুলো জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে ব্যাংকের নতুন শাখা স্থাপন, উপশাখা স্থাপন, এটিএম বুথ স্থাপন, ব্যবসায় উন্নয়ন কেন্দ্র, ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন, ব্যবসায় কেন্দ্র একীভূত বা রূপান্তর, স্থাপনা ভাড়া, ইজারা গ্রহণসহ যাবতীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
নতুন শাখা স্থাপন করার নীতিমালা
চলুন এবার জেনে নিই ব্যাংকের নতুন শাখা স্থাপন, নীতিগত অনুমোদন, শাখার অনুমতিপত্র, এসএমই বা কৃষি শাখা, পল্লী ও শহর শাখা স্থাপনে বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা;
নীতিগত অনুমোদন
ব্যাংকসমূহের নতুন শাখা স্থাপন সংক্রান্ত বার্ষিক পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদনের জন্য যে বছরে নতুন শাখা স্থাপন করা হবে তার অব্যবহিত পূর্ববর্তী বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে দাখিল করতে হবে।
ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা, ঋণের মান, শাখা ব্যবস্থাপনা, আমানতকারীদের সেবা প্রদানসহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনাপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সংখ্যক শাখা স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন প্রদান করবে।
শাখার অনুমতিপত্র
নীতিগত অনুমোদনপ্রাপ্ত শাখা স্থাপনের উদ্দেশ্য ও ব্যবসায়িক সম্ভাব্যতা উল্লেখপূর্বক পরিচালনা পর্ষদে গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ নির্ধারিত ছক (সংযোজনী ‘ক’) মোতাবেক নতুন শাখা স্থাপনের অনুমতিপত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট আবেদন করতে হবে।
ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালার আলোকে অনুমতিপত্রপ্রাপ্ত শাখা নির্ধারিত সময়কালের মধ্যে স্থাপন করা না হলে উক্ত অনুমতিপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।
এসএমই/কৃষি শাখা
নীতিগত অনুমোদনপ্রাপ্ত শাখাগুলোর মধ্য হতে প্রয়োজনে যে কোনো শাখাকে এসএমই/কৃষি শাখা হিসেবে স্থাপনের জন্য পরিচালনা পর্ষদে গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ নির্ধারিত ছক (সংযোজনী ‘ক’) মোতাবেক আবেদন করা যাবে।
এসএমই/কৃষি শাখা বিভাগীয় শহর/সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে স্থাপন করতে হবে এবং ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত এলাকাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
কৃষি শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ব্যতীত অন্যান্য সকল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এরূপ শাখায় জমাকৃত আমানতের অন্যূন ৫০% সংশ্লিষ্ট শাখার আওতাধীন এলাকার এসএমই/কৃষি খাতে ঋণ প্রদান/বিনিয়োগ বা ইসলামি বিনিয়োগ করতে হবে।
শহর ও পল্লী শাখা
ক) সকল সিটি কর্পোরেশন ও ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত পৌরসভা এলাকায় স্থাপিত/স্থাপিতব্য শাখা “শহর শাখা” এবং অন্যান্য এলাকায় স্থাপিত/স্থাপিতব্য শাখা “পল্লী শাখা” হিসেবে গণ্য হবে;
খ) পল্লী শাখার সংখ্যা হবে নীতিগত অনুমোদনপ্রাপ্ত মোট শাখার অন্যূন ৫০%;
গ) বাৎসরিক ভিত্তিতে প্রতিটি শহরে একটির অধিক শহর শাখা স্থাপন করা যাবে না;
ঘ) কোনো এলাকা নতুনভাবে সিটি কর্পোরেশন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হলে বা বিদ্যমান সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হলে কিংবা বিদ্যমান কোনো ‘খ’/‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হলে তদস্থিত ব্যাংক শাখা শহর শাখা হিসেবে গণ্যকরত অবিলম্বে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (ডিভিশন-১: ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা) কে অবহিত করতে হবে।
উপশাখা স্থাপন
ব্যাংকসমূহ নতুন উপশাখা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ যে বছরে নতুন উপশাখা স্থাপন করা হবে তার অব্যবহিত পূর্ববর্তী বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদনপত্র দাখিল করবে।
দাখিলকৃত বার্ষিক পরিকল্পনা মোতাবেক উপশাখা স্থাপনের জন্য পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ নির্ধারিত ছক (সংযোজনী ‘খ’) মোতাবেক আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে। উপশাখা স্থাপনে নিম্নোক্ত শর্তাবলী অনুসরণ করতে হবে:
২.১ ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত এলাকার জনসাধারণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনুমোদনপ্রাপ্ত মোট উপশাখার অন্যূন ৬০% সিটি কর্পোরেশন ও ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত পৌরসভা এলাকার বাইরে স্থাপন করতে হবে;
২.২ উপশাখার মূল অনুমতিপত্র অথবা তার সত্যায়িত কপি সংশ্লিষ্ট উপশাখায় সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এরূপ স্থানে প্রদর্শন করতে হবে;
২.৩ উপশাখা নিকটস্থ পূর্ণাঙ্গ শাখার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে;
২.৪ ব্যাংকের নাম, নিয়ন্ত্রণকারী শাখার নাম এবং ব্যাংক প্রদত্ত উপশাখাযুক্ত নামের সাইনবোর্ড উপশাখার বাইরে সহজে দৃশ্যমান হয় এমন স্থানে স্থাপন করতে হবে;
২.৫ নিয়ন্ত্রণকারী শাখা হতে ১.০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে উপশাখা স্থাপন করা যাবে না। তবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় কোনো বিশেষ জনগোষ্ঠী বা বিশেষ অঞ্চল/এলাকায় উপশাখা স্থাপনের আবশ্যকতা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় এ শর্ত হতে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবে;
২.৬ উপশাখার সামগ্রিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণকারী শাখার বুকস্ অব একাউন্টস্-এ অন্তর্ভুক্ত হবে;
২.৭ উপশাখার ফ্লোর স্পেস হবে সর্বোচ্চ ১০০০ বর্গফুট;
২.৮ উপশাখার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ন্যূনতম ২ জন কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে হবে;
২.৯ প্রচলিত ব্যাংক শাখায় প্রদত্ত/প্রদেয় ব্যাংকিং সেবার জন্য যে নির্ধারিত ফি, চার্জ ও কমিশন প্রযোজ্য তার অনুরূপ ফি, চার্জ ও কমিশন উপশাখায় প্রদত্ত / প্রদেয় সেবার জন্য প্রযোজ্য হবে;
২.১০ উপশাখার ক্যাশ ইন ট্রানজিট ও ক্যাশ অন কাউন্টারের পূর্ণ বীমা আচ্ছাদন নিশ্চিত করতে হবে। নগদ অর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস্ উপশাখায় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভল্ট স্থাপন করা যাবে।
উপশাখার ভল্ট নিয়ন্ত্রণকারী শাখার ভল্ট হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ভল্টের নিরাপত্তা এবং সংরক্ষিত অর্থের বীমা আচ্ছাদন নিশ্চিত করতে হবে;
২.১১ উপশাখায় বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম সম্পাদন করা যাবে না।
বুথ স্থাপন
ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালায় চলুন এবার জেনে নিই ব্যাংকের বিভিন্ন বুথ স্থাপন কালেকশন বুথ, এটিএম বুথ বা ইলেক্ট্রনিক্স বুথ কিভাবে স্থাপন করবেন সেই সম্পর্কে।
কালেকশন বুথ
কালেকশন বুথ স্থাপনের জন্য পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ নির্ধারিত ছক (সংযোজনী ‘খ’) মোতাবেক আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিটি বুথ নিকটস্থ শাখার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। কালেকশন বুথে শুধু সরকারী রাজস্ব আদায়, ইউটিলিটি বিল সংগ্রহ, ডিমান্ড নোট ফি, হাসপাতালের বিভিন্ন বিল, শিক্ষার্থীদের টিউশন ও অন্যান্য ফি, স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান/সংস্থার ফি জমা গ্রহণ করা যাবে।
ইলেক্ট্রনিক বুথ
এটিএমসহ যে কোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক বুথ স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণের আবশ্যকতা নেই। তবে এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নীতিমালা অনুসরণীয় হবে:
ক) ইলেক্ট্রনিক বুথ স্থাপনের জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির অনুমোদন থাকতে হবে এবং বুথ স্থাপনের ১৫ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ছক (সংযোজনী ‘খ’) মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে।
খ) গ্রাহকগণের ব্যবহারের সুবিধা বিবেচনায় প্রতিটি বুথে একক এটিএম/সিডিএম স্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ বর্গফুট পরিসর এবং একাধিক এটিএম/সিডিএম স্থাপনের জন্য আনুপাতিক হারে স্পেস ভাড়া গ্রহণ করা যাবে ।
গ) এ সকল বুথ স্থাপনের ব্যয় ও ভাড়া সংক্রান্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে শাখার জন্য প্রযোজ্য নিয়মাবলী অনুসরণপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঘ) এ জাতীয় বুথে ইলেক্ট্রনিক লেনদেন ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার ব্যাংকিং লেনদেন সম্পাদন করা যাবে না ।
ঙ) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত পরিদর্শনে উল্লিখিত বিষয়ে কোনো প্রকার অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্যবসায় উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন
যে কোনো ধরনের ব্যবসায় উন্নয়ন কেন্দ্র (বিভাগীয় কার্যালয়/সার্কেল অফিস/আঞ্চলিক কার্যালয়/বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার/ইউনিট অফিস/কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার/এসএমই সেন্টার/কল সেন্টার/এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ
প্রভৃতি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন) স্থাপনের জন্য পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ নির্ধারিত ছক (সংযোজনী ‘খ’) মোতাবেক আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এ জাতীয় স্থাপনায় কোনো প্রকার ব্যাংকিং লেনদেন সম্পাদন করা যাবে না।
ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তর
ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তরের প্রয়োজনে বিদ্যমান ভাড়াচুক্তি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অথবা প্রত্যাশিত স্থানান্তর তারিখের ন্যূনতম ৩ মাস পূর্বে শাখার ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ এবং শাখা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ নির্ধারিত ছক (সংযোজনী ‘গ’) মোতাবেক আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তরের আবশ্যকতা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে স্থানান্তরের জন্য অনুমতিপত্র প্রাপ্তির তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে স্থানান্তর করতে হবে, অন্যথায় অনুমতিপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।
শাখা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে স্থানান্তরের ১৫ দিনের মধ্যে শাখার মূল অনুমতিপত্র ফেরত প্রদানপূর্বক সংশোধনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।
ব্যবসা কেন্দ্র একীভূত/রূপান্তর/বন্ধকরণ (ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র)
৬.১: ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনে যে কোনো ব্যবসা কেন্দ্র নিকটবর্তী ব্যবসা কেন্দ্রের সাথে একীভূত করা যাবে। কোনো ব্যবসা কেন্দ্রের ধরন পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
৬.২: কোনো ব্যবসা কেন্দ্র বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বন্ধকরণের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখপূর্বক শাখার ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ এবং শাখা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে ।
৬.৩: ব্যবসা কেন্দ্র একীভূত/রূপান্তর/বন্ধকরণের জন্য নির্ধারিত বা প্রত্যাশিত সময়ের ন্যূনতম ৩ মাস পূর্বে আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।
স্থাপনা ভাড়া/ইজারা গ্রহণ ও নবায়ন
যে কোনো ধরনের স্থাপনা ভাড়া/ইজারা গ্রহণ ও নবায়নের জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ নির্ধারিত ছক (ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা : সংযোজনী ‘ঘ’) মোতাবেক আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে। স্থাপনা ভাড়া/ইজারার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়াদি অনুসরণ করতে হবে:
৭.১: দীর্ঘমেয়াদে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয়ী ও অন্যান্য সুবিধাদি বিবেচনায় অনধিক ২০ বছর মেয়াদে ভবন/ফ্লোর স্পেস ভাড়া/ইজারা গ্রহণ করা যাবে।
৭.২: ব্যাংক-ব্যবসার ক্ষেত্র ও পরিধি, গ্রাহক সংখ্যা ও জনবল ইত্যাদি বিবেচনায় শহর ও পল্লী শাখার আয়তন হবে যথাক্রমে অনধিক ৬,০০০ বর্গফুট ও ৩,০০০ বর্গফুট। তবে বিদ্যমান প্রিন্সিপাল শাখা ও কর্পোরেট শাখার কার্যক্রম তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রকৃত প্রমাণকসহ যুক্তিসঙ্গত কারণ প্রদর্শনপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট আবেদন করা হলে সেক্ষেত্রে প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত প্রদান করবে তা চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে।
৭.৩: ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালায় একই ভাড়াচুক্তির মেয়াদে ন্যূনতম ৩ বছর অন্তর মূল ভাড়ার ১৫% এর অধিক হারে বৃদ্ধি করা যাবে না।
৭.৪: একই ভাড়াচুক্তির মেয়াদে একবারের অধিক অগ্রিম প্রদান করা যাবে না এবং অগ্রিম প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ছকে বর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে:
ক্রমিক | ভাড়াচুক্তির মেয়াদ | প্রদেয় অগ্রিম (সর্বোচ্চ) |
১ | ৪ বছর পর্যন্ত | ১২ মাসের ভাড়ার সমপরিমাণ |
২ | ৪ বছরের বেশি কিন্তু ০৯ বছরের কম | ২৪ মাসের ভাড়ার সমপরিমাণ |
৩ | ৯ বছর বা তদূর্ধ | ৩৬ মাসের ভাড়ার সমপরিমাণ |
ব্যাংকের স্থাপনা ভাড়া/ইজারা গ্রহণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি সম্পাদন হওয়ার ক্ষেত্রে একবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গৃহীত হলে পরবর্তীতে ৩ বছর বা তদূর্ধ্ব মেয়াদে ভাড়াচুক্তি নবায়ন/পুনঃনবায়নের ক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধির হার ১৫% এর মধ্যে সীমিত থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট হতে নতুন করে অনুমোদন গ্রহণের আবশ্যকতা নেই।
তবে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটি কর্তৃক এরূপ ভাড়াচুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অব্যবহিত ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে অবহিত করতে হবে।
ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন/স্থানান্তর ব্যয়
১. নতুন ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে আইটি সরঞ্জাম ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যতীত অন্যান্য খাতে সাকুল্যে প্রতি বর্গফুটের জন্য সর্বোচ্চ ২,০০০/- টাকা এবং বিদ্যমান ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটের জন্য সর্বোচ্চ ১,৪০০/- টাকা পর্যন্ত ব্যয় করা যাবে। আইটি সরঞ্জাম ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যয়ও যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে থাকতে হবে।
২. ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন বা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে মৌলিক প্রয়োজনীয়তা, পর্যাপ্ত গুণগত মান ও টেকসই বিবেচনায় রেখে সাজসজ্জার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নির্বাচন করতে হবে। সাজসজ্জার জন্য পরিবেশ বান্ধব সরঞ্জাম নির্বাচন অগ্রগণ্য বিবেচিত হবে।
৩. ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন বা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে উল্লিখিত ব্যয়সীমা অনুসরণ করে সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ করাসহ ব্যবসা কেন্দ্রসমূহে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ব্যাংকসমূহ নিজ ব্যয়ে ভল্ট নির্মাণ করবে।
প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তরের সময় পূর্বে স্থাপিত ভল্ট নিজ দায়িত্বে ও ব্যয়ে অপসারণ করবে এবং এরূপ ব্যয় উল্লিখিত ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তরের অনুমোদিত ব্যয়সীমা বহির্ভূত থাকবে।
৪. ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে জাতীয় গ্রিড হতে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশাপাশি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা (Solar Panel) স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ধরনের সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্থাপন ব্যয় অনুচ্ছেদ ৮.১ এ উল্লিখিত ব্যয়সীমা বহির্ভূত থাকবে।
৫. ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা উল্লিখিত ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির অনুমোদন থাকতে হবে।
স্থাপনা ভাড়া/ইজারা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ নির্দেশনা
ব্যাংকের যে কোনো ধরনের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভবন/ফ্লোর স্পেস ভাড়া/ইজারা গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হতে ভবনের বিধিবদ্ধ অনুমোদন গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এতদ্ব্যতীত ব্যাংকের নিজস্ব প্রকৌশলী দ্বারা ভবনের কাঠামোগত শক্তি (Structural Strength) নিরূপণসহ তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সেখানে প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।
তাছাড়া ব্যাংকের বিদ্যমান ব্যবসা কেন্দ্রের ভবন/ফ্লোর স্পেসের নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য দুর্ঘটনা মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতিমূলক সকল ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ব্যাংকের উপযুক্ত/দক্ষ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গঠিত অভ্যন্তরীণ পরিদর্শন দল দ্বারা সময়ে সময়ে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
স্থাপনা ভাড়া সংক্রান্ত বিবরণী
প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে অব্যবহিত পূর্ববর্তী বছরের ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র (শাখা ও উপশাখা) এর ভবন/ফ্লোর স্পেস ভাড়া সংক্রান্ত বিবরণী নির্ধারিত ছক (ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা : সংযোজনী ‘ঙ’) মোতাবেক সফটকপি ই-মেইলে (gm.brpd@bb.org.bd) ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (ডিভিশন-১) এ প্রেরণ করতে হবে।
সান্ধ্য ব্যাংকিং
অফিস সময়ের পর সান্ধ্য ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ নির্ধারিত ছক (ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা : সংযোজনী ‘চ’) মোতাবেক আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
সান্ধ্য ব্যাংকিং সময়সূচি ব্যাংকের অফিস সময়ের পর ০২ ঘন্টা হবে এবং এ সময়ে জমা গ্রহণ ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার ব্যাংকিং লেনদেন সম্পাদন করা যাবে না।
ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া নীতিমালা ডাউনলোড
আপনার জন্য ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া নীতিমালা ডাউনলোড পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল। আপনি চাইলে নিচের বাটনে ক্লিক করে ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন ও ভাড়া অথবা ইজারা নীতিমালা বিআরপিডি সার্কুলার নং-১৮/২০১২ এবং বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-৭/২০১৩, ২/২০১৫, ৯/২০১৬, ২৮/২০১৮, ১/২০১৯ ও ২৮/২০১৯ এতদ্বারা রহিত করা হলো। এতৎসত্ত্বেও বর্ণিত সার্কুলার ও সার্কুলার লেটারের আওতায় গৃহীত কার্যক্রম যথারীতি বলবৎ থাকবে।
ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।