জাল নোটের ঝামেলায় পড়ে বিড়ম্বনায় পড়ার পূর্বে বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে জাল ব্যাংক নোট সনাক্ত করার উপায় Way Detect Fake Bangladeshi Bank Note জানা থাকা জরুরি। আমাদের আজকের আয়োজনে বাংলাদেশে চলমান উচ্চ মূল্যমানের ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার ব্যাংক নোট সমূহ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানবো এবং জাল বা নকল নোট সনাক্ত করার টিপস্গুলো শিখে নিব।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৪টি উচ্চমূল্যমানের ব্যাংক বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে এইসব ব্যাংক নোট হস্তান্তরের মাধ্যমে আমরা লেনদেন পরিচালনা করে থাকি।
কিন্তু সমস্যাটি হয় যখন কোনো নকল বা জাল নোটের খপ্পরে পড়ি। এতে আইনি ঝামেলা ছাড়াও আর্থিক ক্ষতি হয়। সেই সাথে বিনা দোষে ফেঁসে যেতে পারেন যে কেউ।
জাল ব্যাংক নোট সনাক্ত করা
অহেতুক ঝামেলা মুক্ত থাকতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটগুলোর নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে। এতে আর্থিক ক্ষতি এবং আইনি ঝামেলা থেকে আপনি বেঁচে থাকতে পারেন।
প্রতিটি উচ্চমূল্য মানের ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে এমন কিছু নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো চাইলেই নকলকারীরা নকল করতে পারেন না।
Fake Bangladeshi Bank Note
আজকের আয়োজনে আমরা সবগুলো ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানবো এবং কিভাবে নকল নোট সনাক্ত করতে হবে সেটিও জানবো।
আমরা এখানে প্রতিটি নোটের আলাদা আলাদা সিকিউরিটি ফিচারগুলো দেখবো এবং জানবো কিভাবে আসল ও নকল নোট চেনা যায়।
এখানে আমরা সবগুলো নোটের কমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেখাবে এর পর সকল নোটের আলাদা আলাদা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য গুলো নিয়ে জানবো।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিকৃতি সম্বলিত ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট লেনদেনে নিম্নবর্ণিত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য খেয়াল করলে আমরা সহজেই আসল নোট চিনতে পারব।
নিরাপত্তা সুতা
১০০ ও ৫০০ টাকা মূল্যমান নোটের বাম পাশে ৪ মি.মি. চওড়া চুলের বেণী সদৃশ নিরাপত্তা সুতা রয়েছে যার একটি অংশ লাল হতে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয় এবং অপর অংশে নোটের মূল্যমান (১০০ টাকা/৫০০টাকা) মুদ্রিত রয়েছে।
২০০ টাকা মূল্যমান নোটের বাম পাশে ৪ মি.মি. চওড়া নিরাপত্তা সুতা রয়েছে যা লাল হতে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয় এবং ১০০০ টাকা মূল্যমান নোটে ৫ মি.মি চওড়া নিরাপত্তা সুতা রয়েছে যা সোনালী হতে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয়।
২০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমান নোটের নিরাপত্তা সুতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম ও নোটের মূল্যমান (২০০ টাকা/১০০০ টাকা) মুদ্রিত আছে। নোটগুলো নাড়াচাড়া করলে এতে হলোগ্রাফিক ইমেজ পরিলক্ষিত হয়।
লুকানো ছাপা
১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমান নোটের সামনের দিকের নিচে মাঝ বরাবর নোটের মূল্যমান ১০০, ৫০০ ও ১০০০ এবং ২০০ টাকা মূল্যমান নোটে TWO HUNDRED TAKA লুকায়িত অবস্থায় মুদ্রিত আছে, যা নোটটি অনুভূমিকভাবে ধরলে দেখা যাবে।
অতি সূক্ষ্ম আকারের লেখা
১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমান নোটের পেছনের দিকের চিহ্নিত অংশে অতি সূক্ষ্ম আকারে BANGLADESH BANK এবং ২০০ টাকা মূল্যমান নোটের পেছনের দিকের চিহ্নিত অংশে অতি সূক্ষ্ম আকারে 200 মুদ্রিত রয়েছে, যা আতশী কাঁচ অথবা উন্নতমানের স্মার্ট মোবাইল ফোনের ক্যামেরা প্রয়োজন মত জুম করে কিংবা “Flashlight & magnifying glass” App এর সহায়তায় মোবাইল ফোন ধরে দেখা যাবে।
রং পরিবর্তনশীল কালি (OVI)
১০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমান নোট এদিক-ওদিক করলে রং পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত অংশ সোনালী হতে সবুজ এবং ৫০০ টাকা মূল্যমান নোটে এটি মেজেন্টা হতে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হবে।
তাছাড়া, ১০০০ টাকা মূল্যমান নোটের পেছনে বাম দিকে থাকা হালকা নীল রংয়ের BANGLADESH BANK লেখাটিও নোট এদিক-ওদিক করলে দেখা যাবে।
SPARK
২০০ টাকা মূল্যমান নোটের উপরের ডান কোণায় সোনালী থেকে সবুজ রংয়ের SPARK (Optically Variable Magnetic Ink) দ্বারা 200 লেখা রয়েছে, নোটটি নাড়াচাড়া করলে যা সোনালী থেকে সবুজ রংয়ে পরিবর্তন হবে। পাশাপাশি একটি উজ্জ্বল বার উপরে নীচে উঠানামা করবে।
অসমতল ছাপা
১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের প্রত্যেক প্রকার নোটের সামনের ও পেছনের দিকের ডিজাইন, মাঝখানের লেখা, ইংরেজী ও বাংলা সংখ্যায় লেখা নোটের মূল্যমান, ৭টি সমান্তরাল হেলানো সরলরেখা (তবে ২০০ টাকা মূল্যমান নোটে ৮টি সমান্তরাল সরলরেখা) এবং এর ঠিক নীচে অবস্থিত ছোট ছোট বৃত্তাকার/ত্রিভুজাকৃতির ছাপ খস্থসে অনুভূত হবে।
এছাড়াও UV লাইটযুক্ত জাল নোট সনাক্তকারী মেশিন ও মোবাইল ফোন এবং আতশী কাঁচ দ্বারা জাল নোট সহজে পরীক্ষা করা যায়।
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত বিষয়গুলো সকল ব্যাংক কমন হিসেবে দেওয়া আছে। এবার চলুন আমরা জেনে নিই নোট ভিত্তিক আলাদা আলাদা কিছু নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য;
১০০ টাকা ব্যাংকনোটের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ টাকা ব্যাংকনোটের মধ্যে এমন কিছু নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে যার মাধ্যমে অনায়েসেই একশত টাকা জাল ব্যাংক নোট সনাক্ত করা যাবে। চলুন ১০০ টাকা নোটের বিশেষ আটটি চিহ্ন যেগুলোর আপনাকে ১০০ টাকার জাল নোট চিনতে সহায়তা করবে।
১০০ টাকা লেখা রং পরিবর্তনশীল হলোগ্রাফিক সুতা
নোটের বামপাশে ৪ মিলিমিটার চওড়া চুলের বেণী সদৃশ নিরাপত্তা সুতা রয়েছে, যার একটি অংশ লাল
হতে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হবে এবং অপর অংশ (উজ্জ্বল রূপালী বার) এ ‘১০০ টাকা’ লেখা রয়েছে।
নোটটি আলোর বিপরীতে ধরলে তা দৃশ্যমান হবে। নোটটি নাড়াচাড়া করলে এতে হলোগ্রাফিক ইমেজ দেখা যাবে।
অতি ছোট আকারের লেখা
অতি ক্ষুদ্র আকারের BANGLADESH BANK লেখা পুন:পুন: লিখে এই লাইনটিতে মুদ্রিত রয়েছে।
লেখাগুলো অতি ক্ষুদ্র আকারের হওয়ায় আতশী কাঁচ ব্যতীত খালি চোখে এগুলো দেখা যাবে না।
ইন্ট্যাগ্লিও কালির অসমতল ছাপা
১. নোটের পিছনের দিকে ইন্ট্যাগ্লিও কালিতে ঐতিহ্যবাহী তারা মসজিদের চিত্র মুদ্রিত আছে, যা হাতের স্পর্শে উঁচু-নীচু অনুভূত হবে।
২. নোটের সামনের দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও বাংলাদেশ ব্যাংক লেখা এবং নোটের মূল্যমান ইন্ট্যাগ্লিও কালিতে মুদ্রিত আছে, যা হাতের স্পর্শে উঁচু-নীচু অনুভূত হবে।
৩. অন্ধদের জন্য নোটের ডানদিকে ৭টি সমান্তরাল লাইন ও এর নীচে ৩টি ছোট বৃত্ত ইন্ট্যাগ্নিও কালিতে মুদ্রিত আছে, যা হাতের স্পর্শে উঁচু-নীচু অনুভূত হবে।
লুকানো ছাপা
নোটের নিচের বর্ডারে সুপ্ত বা লুকানো অবস্থায় ১০০ মুদ্রিত আছে। নোটটি অনুভূমিকভাবে ধরলে লুকানো লেখাটি দেখা যাবে।
OVI (Optically Variable Ink)
নোটের উপরের ডানকোণায় সোনালী থেকে সবুজ রংয়ের OVI (Optically Variable Ink) দ্বারা 100 লেখা রয়েছে, নোটটি নাড়াচাড়া করলে যা সোনালী থেকে সবুজ রংয়ে পরিবর্তন হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি জলছাপ
কাগজে জলছাপ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি; প্রতিকৃতির নিচে 100 লেখা এবং উপরে বামপাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগোর উজ্জ্বলতর জলছাপ রয়েছে।
কটন ফাইবার কাগজ
নোটটি ১০০% কটন ফাইবার দ্বারা পরিবেশ বান্ধব উন্নত মানের কাগজে মুদ্রিত। এতে লাল, নীল ও হলুদ রংয়ের
অদৃশ্য ফাইবার রয়েছে, যা UV (Ultra Voilet) লাইটে দৃশ্যমান হবে।
২০০ টাকা ব্যাংক নোটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০ টাকার ব্যাংক নোট চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলুন এবার ২০০ টাকা ব্যাংক নোটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য গুলো জেনে নিই যাতে সহজে এর নকল বা জাল সনাক্ত করে আর্থিক ক্ষতি থেকে বাচঁতে পারি।