আজকে আমার জানবো গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক গসাগু এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক লসাগু নিয়ে আলোচনা। এই পাঠে একজন শিক্ষক ৬ষ্ঠ শ্রেণির গণিত ক্লাসে গ সা গু এবং ল সা গু শেখানোর কৌশলগুলো জানতে পারবেন।
ইতপূর্বে আমরা জেনেছি বিভাজ্যতার ধারণা এবং বিভাজ্যতা পড়ানোর নিয়ম; আশা করছি আপনার অনেক কাজে এসেছে এবং ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত বিষয়টি পড়ানোর ক্ষেত্রে উপকারে আসবে।
রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো, মডিউল-০৩; নিবন্ধ ০৫, গসাগু এবং লসাগু এর ধারণা
এই নিবন্ধে গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক অর্থাৎ গসাগু এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বা লসাগু নিয়ে আলোচনা করা হবে। পূর্বের আলোচনায় সবসময় বলাহয়েছে শ্রেণিকক্ষে গণিতকে সবসময় বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত করার কথা।
এই লসাগু এবং গসাগু সংক্রান্ত সমস্যা বাস্তব জীবনের কোন সমস্যা সমাধানে কাজে লাগবে?- এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থীর মনে থাকতেই পারে। তাই এখানে এমন কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেখানে বাস্তব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করে লসাগু এবং গসাগু’র সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।
শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে এভাবে বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত এবং শিক্ষার্থীদের বোধগম্য হবে এমন উদাহরণের সাহায্যে পাঠদান করলে শিক্ষার্থীদের শিখন স্থায়ী হবে এবং তারা এসব ধারণা শ্রেণিকক্ষের বাইরেও কাজে লাগাতে পারবে।
গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক গসাগু এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক লসাগু নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা
লসাগু ও গসাগু’র ধারণার ভিডিওতে এমন কিছু সমস্যা সমাধান করা হয়েছে যেখানে বাস্তব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করে লসাগু এবং গসাগু’র সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।

তুমি এবং তোমার বন্ধু একটি গোলাকার মাঠে দৌড়াচ্ছ। তুমি প্রতি 4 মিনিট পরপর পানি পান করার জন্য একটি গাছের নিচে এসে দাঁড়াও এবং তোমার বন্ধু 5 মিনিট পরপর পানি পান করতে সেই একই গাছের নিচে এসে দাঁড়ায়। এখন সময় হল 4 টা বেজে 20 মিনিট এবং এখন তোমাদের দুজনেরই পানি পান করতে এসে দেখে হয়ে গেল। এরপর আবার কখন তোমাদের একই জায়গায় দেখা হবে?
সম্পূরক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে গসাগু এবং লসাগু এর আরও ভিডিও এবং অনুশীলনী এই মডিউলের শেষে সংযোজন করা রয়েছে। আপনি চাইলেই এই ভিডিওটি শেষে প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো দেখে নিতে পারেন বা অনুশীলনীগুলো চর্চা করতে পারেন।
শিখন-শেখানো কার্যক্রম (গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক গসাগু এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক লসাগু নিয়ে আলোচনা)
এবারে দেখি যদি গসাগু এবং লসাগু’র ধারণা নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করি সেটি কীভাবে করতে পারি। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাক্রমে “গসাগু এবং লসাগু”- এর শিখন- শেখানো নির্দেশনা’য় কী বলা হয়েছে।

শিক্ষক স্বাভাবিক সংখ্যার গসাগু ও লসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে যাচাই করবেন। সাধারণ এবং দশমিক ভগ্নাংশের গসাগু ও লসাগু নির্ণয় পদ্ধতি উদাহরণের সাহায্যে বোঝাবেন এবং শিক্ষার্থীদের গসাগু ও লসাগু নির্ণয় করতে দেবেন।
অর্থাৎ এই শিখন- শেখানো নির্দেশনা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জন করতে শিক্ষক কী কী উপায়ে শ্রেণিকক্ষে এই বিষয় সম্পর্কে পূর্বজ্ঞান যাচাই করবেন, পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে গসাগু এবং লসাগু এর ধারণাটি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কিন্তু চতুর্থ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা গুণনীয়ক এবং গুণিতকের ধারণা পেয়েছে।
তাহলে আমাদের গুণিতক ও গুণনীয়কের ধারণার সাথে গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতকের ধারণা সম্পৃক্ত করে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে হবে। আর সেটি করা হবে পূর্বজ্ঞান যাচাইয়ের মাধ্যমে;
গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক গসাগু এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক লসাগু সংক্রান্ত পূর্বজ্ঞান যাচাই
বিভিন্ন উদাহরণ ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান যাচাই করতে হবে। এজন্য কী কী বিষয় আলোচনা করা যায় সেটি শিক্ষক হিসেবে আমাদের ভেবে দেখতে হবে।
তবে একটি বিষয় আমরা অবশ্যই লক্ষ্য রাখবো যেন বাস্তব জীবনের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কোন ঘটনা, বিষয়, উদাহরণ ব্যবহার করা হয়। তাহলে শিক্ষার্থীরা সেটি সহজে বুঝতে পারবে।
ক. গুণিনীয়ক ও গুনিতক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করতে পারেন।
খ. লসাগু ও গসাগু এর সম্পূর্ণ অর্থ কী তা জিজ্ঞেস করতে পারেন।
গ. সব সংখ্যারই গুণনীয়ক আছে কি না তা জানতে চাইতে পারেন।
ঘ. এক জোড়া সংখ্যা বোর্ডে লিখে এর গুণনীয়ক ও গুনিতক নির্ণয় করতে বলতে পারেন।
পাঠদান কার্যক্রম – গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক গসাগু এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক লসাগু
এরপর ‘গসাগু ও লসাগু’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন শিক্ষক এবং কীভাবে গসাগু, লসাগু বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নির্ণয় করা যায় সেটি ব্যাখ্যা করে বলবেন।
এখানে লক্ষণীয় পাঠদানে শিক্ষণ শিখন পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বিষয় অনুযায়ী কোন পদ্ধতি বা কী কী উপায়ে বিষয়টি উপস্থাপন করলে শিক্ষার্থীদের শিখনকে সহজ এবং স্থায়ী করবে সেটি অবশ্যই শিক্ষককে বিবেচনা করতে হবে।
সমগ্র পাঠে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে পাঠদান করবেন।
এই অংশগ্রহণ করানোর ক্ষেত্রে হতে পারে – একক কাজ, জোড়ায় কাজ, দলীয় কাজ, প্রশ্নোত্তর, গল্পবলা, বলতে দেওয়া, লিখতে দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতি বিষয় অনুযায়ী ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন।

যেমন- এখানে এই ছবিটি দিয়ে লসাগু এবং গসাগু’র প্রাথমিক ধারণাটি খুব সহজেই বোঝা যায়৷ শিক্ষক এরকম কোন ছবি ব্যবহার করে ধারণার সূত্রপাত করতে পারেন, অথবা সম্পূর্ণ আলোচনা শেষে যখন পুরো আলোচনকে গুছিয়ে আনবেন তখন এই ছবিটি দিয়ে একবাক্যে বলে তা শেষ করতে পারেন।
শিক্ষা উপকরণ (লসাগু এবং গসাগু পাঠদান)
কয়েক ধরনের শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে পাঠ উপস্থাপন করে শ্রেণি কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা যায়। এক্ষেত্রে কয়েকটি উপায়ে পাঠটি উপস্থাপন করা যেতে পারেঃ
১। ছবি ব্যবহার করে গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারেন
পাঠদানের পূর্বে ছবি নিয়ে আসতে পারেন, কিংবা বোর্ডে আঁকতে পারেন। তবে এই ছবি- শিক্ষার্থীর পরিচিত জগতের সাথে সম্পর্কযুক্ত কোন ঘটনা, উদাহরণ বা কোন চরিত্রের সাথে মিল রেখে করলে তা শিক্ষার্থীর শিখনকে সহজ করে।
যেমন- ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল- একজন শিক্ষার্থী ও তার বন্ধু মাঠে দৌড়াচ্ছে এমন একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছিল।
২। বোর্ড, খাতা কলমের ব্যবহার
সচরাচর বোর্ড এবং খাতা কলমের ব্যবহারই শ্রেণিকক্ষে হয়ে থাকে।
৩। পাঠ সংশ্লিষ্ট ভিডিও প্রদর্শন করে
যেমন এখানে লসাগু ও গসাগু বিষয়ক ভিডিওর কোনো অংশ ব্যাখ্যা করে আলোচনা করতে পারেন। আমাদের এই মডিউলের সম্পূরক উপকরণে লসাগু, গসাগু’র ধারণা সম্পর্কিত কিছু ভিডিও দেওয়া আছে। সেগুলো সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।
মূল্যায়ন (গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক গসাগু এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক লসাগু)
এভাবে ধাপে ধাপে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গসাগু ও লসাগু’র ধারণার সাথে পরিচিত করবেন। এবং শিক্ষার্থীদের শিখনফল অর্জন হয়েছে কী না তা মূল্যায়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করবেন। শিক্ষাক্রমে এই বিষয়ে “মূল্যায়ন নির্দেশনা”-তে বলা হয়েছে-
ক. শিক্ষক বাড়ির কাজ ও শ্রেণির কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করবেন।
খ. ছক উপস্থাপন করার সময় শিক্ষার্থীদের উপস্থাপন কৌশল মূল্যায়ন করবেন।
গ. শ্রেণি অভিক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করবেন।
ঘ. নির্ধারিত মানদণ্ডের সাহায্যে দলগত কাজ মূল্যায়ন করবেন।
তাহলে আমরা বুঝতে পারছি একজন শিক্ষক নানাভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে পারেন। যেমন-
১। শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন-
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে পারেন। যেমন: প্রশ্ন-উত্তর, বোর্ডে কিংবা, খাতায় লিখা;
তাহলে গসাগু ও লসাগু’র ধারণার ক্ষেত্রে শিক্ষক এভাবে মূল্যায়ন করতে পারেন-
দলগত/একক কাজ:
১. ১২ ও ৩০ এর লসাগু ও গসাগু নির্ণয় কর। এই সমস্যাটি বোর্ডে লিখে দিয়ে তা শিক্ষার্থীদের সমাধান করতে বলতে পারেন।
২. শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দলে ভাগ করে দিবেন, একেক দলকে একেকটি সংখ্যার জোড়ার লসাগু ও গসাগু নির্ণয় করতে দিতে পারেন।
২। বাড়ির কাজে মাধ্যমে মূল্যায়ন
বাড়ির কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, বাড়ির কাজ এমন কিছু দিতে হবে যেন তা শিক্ষার্থীর চিন্তাকে সক্রিয় করে।
অর্থাৎ, বাড়ির কাজ এমন হবে যাতে তা করার সময় শিক্ষার্থীকে চিন্তা করে উত্তর লিখতে হয়। এ ধরনের কাজ দিলে শ্রেণিতে উপস্থাপিত পাঠ আরো বেশি স্থায়ী হবে এবং শিক্ষার্থীর বিষয়ভিত্তিক ধারণা পাকাপোক্ত হবে।
৩। শ্রেণি অভিক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন
শিক্ষক কোন বিষয়/ অধ্যায় আলোচনা শেষে পরীক্ষা নিতে পারেন। যেমন- আজকের বিষয়ে আলোচনা শেষে অঙ্কপাতন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণনা রীতি নিয়ে বিভিন্ন ছোট ছোট কুইজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন যাচাই করা যেতে পারে।
প্রিয় পাঠক, গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক গসাগু এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক লসাগু নিয়ে আলোচনা আর্টিকেলটি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য প্রণীত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মুক্তপাঠ প্লাটফর্মে রিচ টু টিচ: গণিত শিখন-শেখানো (ষষ্ঠ শ্রেণি) অনলাইন কোর্স থেকে সংগৃহিত। এটি শুধুমাত্র আপনাদের এই কোর্সটি সহজে বোঝার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার কোনো আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি চাইলে আমাদের ফেসবুক পেইজে মেসেজ এর মাধ্যমে আপনার সমস্যাটি জানাতে পারেন।
গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়কের উদাহরণ Example of greatest common factor
গসাগু কথার সমস্যা ১ – GCF Word Problem
গসাগু কথার সমস্যা ২ – GCF Word Problem 2
Least common multiple (LCM) exercise: 3 numbers Bangla
ল.সা.গু. এবং গ.সা.গু. এর কথার সমস্যা (পার্থক্য) – LCM & GCF word problem
LCM and GCF word problems Bangla
প্রশ্ন-১: শিখন- শেখানো কার্যক্রমে নিচের কোনটি ‘অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি’র অন্তর্ভুক্ত নয়?
ক. প্রশ্নোত্তর,
খ. বলতে দেওয়া-লিখতে দেওয়া,
গ. বক্তৃতা দেওয়া,
ঘ. দলীয় কাজ;
প্রশ্ন-২: শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দলগত কাজ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোনটি করণীয়?
ক. মূল্যায়ন মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে
খ. বাড়ির কাজ প্রদান করতে হবে
গ. অভিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে
ঘ. উপস্থাপন দক্ষতা মূল্যায়ন করতে হবে
প্রশ্ন-৩: শিক্ষার্থীরা গুনিতক ও গুণনীয়কের ধারণা পেয়েছে-
ক. চতুর্থ শ্রেণিতে
খ. পঞ্চম শ্রেণিতে
গ. ষষ্ঠ শ্রেণিতে
ঘ. সপ্তম শ্রেণিতে