এতিম ও নারীদের সমস্যা এবং অধিকার সম্পর্কে
وقونَكَ فِي النِّسَاء قبل الله يُنيكُم بِهِنَّ وَمَا يُثلي عَلَيْكُمْ فِي قُلِ الكِتبِ فِي يَسمَّى النِّسَاء النِى لَا تُؤْتُونَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَتَرْغَبُونَ أَن تشكوهَنَ وَالْمُسْتَضْعَفينَ مِنَ الْوِلْدَانِ وَأَنْ تَقُومُوا لِيَتُم بِالْقِسْطِ، وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرِ فَإِنَّ اللهَ كَانَ بِهِ عَلَيْمًا * وَإِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِنْ بَعْلِهَا نُشُوراً اَوْ اعتراضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْعَاطَ وَالطَّلَعُ خَيْرُط وان تحسنوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ أ وأحْضِرَتِ الْاَنْفَسُ الشَّحَ ط وَإِنْ َتـ
خَبِيرًا
এবং লোকেরা তোমার নিকট নারীদের বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জানতে bia 14, ais তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন এবং (সে সঙ্গে সে হুকুমগুলোও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন) এই কিতাবে বর্ণিত যে এতিম মেয়েদের প্রাপ্য তোমরা প্রদান করো না, তাদের বিবাহ করতে তোমরা আগ্রহ পোষণ করো না এবং (সেই হুকুমগুলোও) যা অসহায়-অক্ষম শিশুদের সম্পর্কে দেয়া হয়েছে। তোমরা এতিমদের প্রতি ন্যায়বিচার করবে।
তোমরা যে কল্যাণকর কাজ করবে, তা আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। কোনো নারী যদি তার স্বামীর দিক থেকে নিষ্ঠুর ব্যবহার কিংবা তাকে পরিত্যাগের আশংকা করে, তখন স্বামী-স্ত্রী যদি তাদের মধ্যে পারস্পরিক আপোষে মিটমাট করে তবে তাতে দোষ নেই ।
এরূপ মীমাংসাই উত্তম। যদিও মানুষের মন লালসার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু তোমরা যদি ইহসান অবলম্বন কর ও আত্মসংযমী হও তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কর্মনীতি সম্পর্কে অবহিত আছেন। (সূরা অন-নিসা: আয়াত ১২৭-১২৮)
এতিম ও নারীদের সমস্যা এবং অধিকার সম্পর্কে
প্ৰেক্ষিত
সূরা নিসায় ব্যাপকভাবে পারিবারিক ব্যবস্থাপনা, নারী ও এতিমদের অধিকার ও সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ আয়াত দু’টিতেও এতিম ও নারীদের সমস্যা, তাদের অধিকার ও তৎসম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লামা আলূসী এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, “মিরাসের আয়াত নাযিল হলে বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করলো।
কেননা এটা তাদের কঠিন মনে হলো। তারা প্রশ্ন করতে লাগলো, সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে অক্ষম-অযোগ্য কম বয়সী ছেলেরাও কি ওয়ারিশ হবে? কম বয়সী মেয়েরাও কি উত্তরাধিকার পাবে? আসলে তারা আশা করছিল যে, এ ব্যাপারে আসমান থেকে কোনো সংশোধনী আসবে।
কিন্তু এ ব্যাপারে সাগ্রহে অপেক্ষা করতে করতে তারা দেখল যে, কোনো ওহি আর এলো না। তখন তারা ভাবলো, এ বিষয়ে যা হবার তা হয়েই গেছে তবে তো মিরাস সংক্রান্ত হুকুম মেনে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এতিম ও নারীদের সমস্যা এবং অধিকার সম্পর্কে।
তারা বলাবলি করলো, চল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আবার প্রশ্ন করা যাক। এ প্রস্তাব অনুসারে তাঁকে তারা পুনরায় প্রশ্ন করায় এ (১২৭ নং) আয়াত নাযিল হয়।
সাধারণ তাৎপর্য
আয়াতদ্বয়ে নারীদের অধিকার সম্পর্কে যে সব বিধান ও নির্দেশ এ সূরার শুরুতে দেয়া হয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এতিম ছেলে-মেয়েদের সম্পত্তি ও অন্যান্য অধিকারের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
এতিম ও নারীদের আর্থ-সামাজিক অধিকারের বেশ কিছু আলোচনা সূরা নিসার পূর্ববর্তী আয়াতসমূহের আলোচনা প্রসঙ্গে এ গ্রন্থে বলা হয়েছে। ১২৮ নং আয়াতে নতুন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে।
এ আয়াতের মাধ্যমে তালাক ও বিচ্ছেদের পরিবর্তে পারস্পরিক অধিকারের কিছু কম-বেশির ভিত্তিতে মীমাংসা করে নেয়াকে উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মানসিক সংকীর্ণতাকে নিন্দা করা হয়েছে। স্ত্রীর সদ্ব্যবহার বা ইহসানকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
আর্থ সামাজিক তাৎপর্য
পারিবারিক সংগঠন ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য পারিবারিক শান্তি রক্ষা সংক্রান্ত বিস্তৃত বিধি-বিধান ইসলাম দিয়েছে। এর বিরাট অর্থনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। মজবুত পারিবারিক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত কল্যাণকর। এতিম ও নারীদের সমস্যা এবং অধিকার সম্পর্কে।
এর মাধ্যমে কেবল সামাজিক শান্তিই রক্ষা পায় না, অনেক অসহায় লোকেরও ব্যবস্থা হয়। যে সমাজে পারিবারিক ব্যবস্থা শক্তিশালী, সেখানে দুঃস্থ লোকের দায়-দায়িত্ব সরকার ও সমাজকে কম বহন করতে হবে। ১২৮ নং আয়াতে উল্লিখিত তালাকের পরিবর্তে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আপোষ-মীমাংসার বিধান এ জন্যই দেয়া হয়েছে।
তেমনিভাবে ১২৭ নং আয়াতে এতিম শিশুদের কথা ও এতিম মেয়েদের কথা আলাদা আলাদাভাবে উল্লেখ করে তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাওয়া, তাদের সম্পত্তি তাদের প্রত্যার্পণ করা, তাদের অন্যান্য দান পাওয়ার (যেসব বিষয় সূরা নিসার প্রথম দু’ রুকুতে আলোচিত হয়েছে) অধিকারের কথা জোরের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি ইসলামী রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে – এসব বিষয়কে যথাযোগ্য গুরুত্ব দিয়ে আইন ও অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে শিশুদের সব অধিকার সংরক্ষণ করা।
আরো পড়ুন: আমানতের খেয়ানত প্ৰসঙ্গে