বিগত ছয়-সাত দশক যাবত মুসলিম বিশ্বে জাতীয়করণ (Nationalization) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গত শতাব্দীর চল্লিশ দশকের শেষের দিক থেকে মুসলিম বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তির যাঁতাকল হতে স্বাধীনতা লাভ করতে শুরু করে।
সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এসব মুসলিম রাষ্ট্রের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থনৈতিক বুনিয়াদ মজবুত ও দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হয়।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনীতির পুনর্গঠনে সরকারের ভূমিকা
তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনীতির পুনর্গঠনে সরকারের ভূমিকা মুখ্য হয়ে ওঠে। দূর ভবিষ্যতের জন্য এসব সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
- আরও পড়ুনঃ এসএসসি পরীক্ষা ফরম ফিলাপ ২০২৩ বিজ্ঞপ্তি
এ প্রেক্ষিতে জাতীয়করণের বিষয়টি একটি মূল সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মুসলিম দেশসমূহের সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহ এ ব্যাপারে ইসলামের মতাদর্শকে উপেক্ষা করতে পারেনি।
ইসলাম প্রকৃতিগতভাবেই একটি ব্যাপক বুদ্ধিভিত্তিক আদর্শ জীবন ব্যবস্থা। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে হোক অথবা কর্ম পদ্ধতির ক্ষেত্রে সর্বত্রই ইসলামের কিছু বক্তব্য রয়েছে।
ফলে মুসলিম দেশসমূহে এ প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে যে ভূমি, উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণসমূহ অথবা কোনো সম্পদের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করতে পারে কিনা এবং যদি তা হয়, তবে তা কি শর্তে ও কি উদ্দেশ্যে এবং ইসলামে মালিকানার ধারণাই বা কি?
ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ
আলোচ্য প্রবন্ধে মুসলিম অর্থনীতিবিদগণ ইসলামে মালিকানা বলতে কি বুঝেছেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে মালিকানার ধারণা, এ ব্যাপারে বর্তমান মুসলিম দেশসমূহের মনোভাব কি এবং ভবিষ্যতে মুসলিম দেশসমূহের জন্য কিছু পরামর্শ উপস্থাপন করার প্রয়াস পাব।
ইসলামী অর্থনীতিবিদগণ এ ব্যাপারে একমত যে, প্রকৃত মালিকানা একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহর এবং মানুষ আমানতদার হিসেবেই সম্পদের অধিকারী হয়। তাই সে ইসলামী শরিয়তের বিধান ও উপরে বর্ণিত অর্থনৈতিক দর্শন মোতাবেক আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।
সম্পদ আহরণ, এর ব্যবহার ও হস্তান্তর খোদা নিরূপিত সীমারেখার মধ্যে এবং আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মেই হতে হবে। ব্যক্তিমালিকানার অধিকারের সাথে সাথে অন্যদের প্রতি কিছু দায়- দায়িত্বও নির্দিষ্ট করা আছে। ব্যক্তিগত সম্পদের পর সরকারি মালিকানা ইসলামের একটি কেন্দ্রিয় ধারণা।
এ দু’টোর সীমারেখা দৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি বরং অবস্থা ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কতগুলো নীতির আলোকে তা নির্ধারিত হবে।
ইসলামের প্রথম যুগের অর্থনীতিবিদগণ ব্যক্তিগত সম্পদ ও মালিকানার উপর জোর দিয়েছেন। তাদের এ দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি হলো প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের জীবনধারা – যারা ব্যক্তিগত ভূমি ও ব্যবসার অধিকারী ছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন কৃষিজীবী বা ব্যবসায়ী।
ব্যবসা ও কৃষি সম্পর্কে এবং এর বৈধ ও অবৈধ দিক সম্পর্কে হাদিস শাস্ত্রে বিস্তারিত অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে। কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে রচিত ফিকাহ শাস্ত্রেও এ বিষয়ে প্রচুর আলোচনা রয়েছে। ব্যক্তিগত ব্যবসা, কৃষি ও শিল্পের বৈধতা সম্পর্কে প্রথম যুগের পণ্ডিতগণের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।
আল-কুরআন ব্যবসার অনুমতি দিয়েছে (সূরা বাকারা: আয়াত ২৭৬), সম্পদ উপার্জন ও মানুষের কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দান করেছে (সূরা জুমা: আয়াত ১০), উত্তরাধিকারের মাধ্যমে সম্পদ হস্তান্তরের অনুমতি দিয়েছে (সূরা নিসা: আয়াত ৭,১১,১২,১৭৬) যা ব্যক্তিগত সম্পদ ও মালিকানার স্বীকৃতির প্রমাণ।
মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী
বর্তমানকালে এ মতের প্রবক্তা হচ্ছেন মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী (মাশাইয়াত-এ ইসলাম) ও মিশরের সাইয়্যেদ কুতুব (ইসলামে সামাজিক সুবিচার)। তবে তারা রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করেননি, কিন্তু এটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে চান। (ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
তবে কিছু সংখ্যক বিজ্ঞ ইসলামী চিন্তাবিদ ব্যক্তিগত মালিকানার কেন্দ্রীয় অবস্থানকে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে শহীদ আবদুল কাদের আওদাহ-এর দীর্ঘ উদ্ধৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, শাসক ও পরামর্শদাতাদের মাধ্যমে সম্পদ ব্যবহারের উপায় উপকরণ সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ করার অধিকার সমাজের রয়েছে।
সমগ্র সম্পদের মালিক আল্লাহ। তিনি সমাজের কল্যাণের জন্যই এসব সৃষ্টি করেছেন । ইসলামের বিধান হচ্ছে যে, আল্লাহর মালিকানাধীন সব সম্পদই সমাজের কল্যাণের জন্য এবং সম্পদের উপর সমাজেরই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, ব্যক্তির নয়।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
সমাজ প্রতিনিধিত্বকারী শাসক শ্রেণির মাধ্যমে জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে কোনো সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা রহিত করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে ।
যদিও ইসলাম সীমাহীন মালিকানার অনুমতি দেয় তথাপি সমাজ হক্কুল্লাহ (আল্লাহর অধিকার/জনকল্যাণ) নিশ্চিত করা ও এর সুষম ব্যবহারের লক্ষ্যে ব্যক্তিমালিকানার সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
সমাজ তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই এটা করতে পারে। শহরাঞ্চলের জমিজমা, বাড়ি-ঘর ও কৃষি ক্ষেত্রের সীমা নির্ধারণেও নীতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মুসলিম পণ্ডিতবর্গ ‘জাতীয়করণ’ বিষয়টি সম্পর্কে ক্রমান্বয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেছেন বলে আমার মনে হয়। এর দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত ইসলাম তত্ত্বগতভাবে এ বিষয়টির ব্যাখ্যার ব্যাপারে নমনীয়তা অবলম্বন করেছে। (ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
পেশা ও উপার্জনের অধিকার
কেননা ইসলামে একদিকে পেশা ও উপার্জনের অধিকার (সূরা বাকারা: আয়াত ২৭৫), ব্যক্তিগত সম্পদের উপর অবৈধ হস্তক্ষেপের নিষিদ্ধতাকে (সূরা নিসা: আয়াত ২৯; বিদায় হজ্জের ভাষণ) গুরুত্ব দিয়েছে, অপরদিকে সামাজিক ন্যায়বিচার, অন্যের অধিকার (সূরা বাকারা: আয়াত ১৭৭ ও সূরা তওবা: আয়াত ১০৩) এবং সম্পদের সর্বাধিক বন্টনের (সূরা হাশর: আয়াত ৭) উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
ইসলামী পণ্ডিতগণের মধ্যমপন্থা অবলম্বনের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে বিশ্বে বিগত দিনের জাতীয়করণের অভিজ্ঞতা। জাতীয়করণ অন্যায় ও বেআইনীভাবে অর্জিত ভূমির উপর সামন্ততান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করেছে; অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্র ও সেক্টরে শোষণের অবসানে সহায়তা করেছে।
অপরদিকে জাতীয়করণ অনেক ক্ষেত্রেই অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও উৎপাদনে ঘাটতি বৃদ্ধি করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হরণ করেছে।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
ফলে মুসলিম অর্থনীতিবিদগণ সতর্কতার সাথে অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবং জাতীয়করণ করার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন কেবল যেখানে সামাজিক কল্যাণ ও বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থে জাতীয়করণ প্রয়োজন।
অতীত ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আমরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় এ তিন প্রকারের মালিকানা দেখতে পাই । প্রাকৃতিক সম্পদ যথা – বন, খনি, পানি সম্পদ এবং বিশাল ভূখণ্ড রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছিল।
চারণভূমি, সমাধিস্থান ইত্যাদি স্থানীয় সমাজের প্রয়োজনীয় সম্পদের মালিক ছিল সমাজ, ব্যক্তি নয়। তবে অধিকাংশ কৃষিভূমি, ঘর-বাড়ি, কারখানা, পশুসম্পদ ইত্যাদি ব্যক্তি মালিকানায়ই ছিল। হাদিসে ব্যক্তিগত মালিকানার বিস্তারিত বিবরণ আছে।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ
প্রতিটি হাদিস ও ফিকাহর গ্রন্থে ব্যবসা, কৃষি ইত্যাদি সম্পর্কে পৃথক পৃথক অধ্যায় রয়েছে যা স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, ব্যক্তি মালিকানাই ইসলামের প্রাথমিক যুগে মালিকানার সাধারণ রূপ ছিল। ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসে তত্ত্ব ভিত্তিক মালিকানা নির্ধারণে এ বিষয়টির বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না যেমনটি কোনো কোনো লেখক করেছেন।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রীয় বনাম ব্যক্তি মালিকানার বিষয়টি ভালভাবে উপলব্ধি করার জন্য ইসলামের প্রথম যুগের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। সিরিয়া ও ইরাক বিজয়ের পর সদ্য অধিকৃত ভূমি বিজয়ী সেনাবাহিনীর মধ্যে বিতরণ করা হবে না রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকবে এ নিয়ে মহানবী (সা.)-এর সাহাবাদের মধ্যে এক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
হযরত যুবায়ের, বিলাল, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, সালমান ফারসী এবং আরও কতিপয় সাহাবি (রা.) অধিকৃত ভূমি সৈনিকদের মধ্যে বিতরণের দাবী জানান। অপরদিকে উমর, আলী, মুআয বিন জাবাল (রা.) ভবিষ্যৎ মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং রাষ্ট্রের রাজস্ব বৃদ্ধিকল্পে এসব ভূমি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রাখার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন।
দু’-তিন দিন যাবৎ দীর্ঘ বিতর্কের পর মজলিশ-ই-শুরায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, এ সব ভূমি রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকবে যা সাহাবিগণের দ্বারা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় এবং সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হয়েছিল।
বিজিত ভূমি রাষ্ট্রীয় ভূমিতে পরিণত হয় এবং তা একপ্রকার ভূমিকর (খারাজ) এর বিনিময়ে কৃষকদের নিকট ইজারা দেয়া হয়। ভূমি করের বাৎসরিক আয় রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালন ও জনকল্যাণে ব্যয় করা হত।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
এ ঘটনা স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে যখন কোনো সম্পদকে রাষ্ট্রীয় অথবা ব্যক্তি সম্পদে পরিণত করার এখতিয়ার থাকে তখন জনকল্যাণের বিষয়টিকে অত্যধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। আর কিয়াসের ভিত্তিতে এর অনুরূপ অন্যান্য ক্ষেত্রেও এ দৃষ্টান্ত সমভাবে প্রযোজ্য হতে পারে।
ইসলামী রাষ্ট্র ইরান ও পাকিস্তানে ব্যাংকিং ব্যবস্থা
বর্তমানে ইসলামী রাষ্ট্র ইরান ও পাকিস্তানে ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বীমা ও (ভারী) মৌলিক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ অধিকাংশ আলেমদের সমর্থনে জাতীয়করণ করা হয়েছে । ইরানের উলামা পরিচালিত সরকার জাতীয়করণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
এমনকি বাংলাদেশেও ইসলামী দলসমূহ ইতোমধ্যে জাতীয়করণকৃত মূল সেক্টরগুলোর বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেনি এতে প্রতীয়মান হয় যে, উলামা সমাজ ও ইসলামী দলসমূহের নিকট ক্রমশ গণস্বার্থে মূল অর্থনৈতিক সেক্টরগুলোর জাতীয়করণ করার প্রয়োজনীয়তা গ্রহণীয় হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে সম্পদের কেন্দ্রীভূত করে পাহাড় গড়া অর্থনৈতিক অবিচার এবং সামাজিকভাবে মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রতিরোধ কল্পে ‘জাতীয়করণ’ ইসলামী সরকারের একটি কর্মপদ্ধতি হতে পারে কিনা তা এ পর্যায়ে বিবেচনা করা যেতে পারে।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
সম্পদের কেন্দ্রীভূত করার ক্ষেত্রে ইসলামের নিষেধাজ্ঞাত এবং ন্যায় বিচারের (সুষ্ঠু বণ্টনের)o উপর গুরত্বারোপ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। সমাজের সকল প্রকার অবিচার ও অসাম্য বিদূরিত করা নবীদের একটি কর্তব্য ছিল যা সূরা হাদীদে উল্লেখ করা হয়েছে।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
নিশ্চয়ই আমরা নবীদেরকে স্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি, তাঁদেরকে দেয়া হয়েছে গ্রন্থ এবং আরও দেয়া হয়েছে সত্যাসত্য নিরূপণের মানদণ্ড, যাতে তারা ভারসাম্য ও ইনসাফের উপর মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
(সূরা হাদীদ: আয়াত ২৫)
নবী রাসূলগণের অবর্তমানে মানবতাকে ভারসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করা মুসলিম মিল্লাত বিশেষ করে সরকারের দায়িত্ব। যদি কোনো উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে ভারসাম্য বিনষ্ট হয় তাহলে তা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
ক্ষতিপূরণসহ বা ক্ষতিপূরণ ব্যতিত (অবৈধ পন্থায় আহরিত সম্পদের ক্ষেত্রে) জাতীয়করণ ইসলামী সরকারের একটি কর্মপন্থা হতে পারে। যাহোক, অনুরূপ সিদ্ধান্ত বা কর্মপন্থা ইনসাফ ও জনগণের প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রতিফলিত মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে। অনুমান ভিত্তিক বা কারো খেয়ালখুশী মতো তা করা ঠিক হবে না ।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, জাতীয়করণ (Nationalization) পরিভাষার পরিবর্তে জাতীয় ব্যবস্থাপনা (National Management ) পরিভাষাটি ব্যবহার করা অধিক যুক্তিযুক্ত।
জাতীয় ব্যবস্থাপনা পরিভাষাটি ইসলামী ভাবধারার সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল বলে মনে হয়। কেননা ইসলামে সরকার বা ব্যক্তি কেউ মালিক হননা, সবাই ব্যবস্থাপনা করেন।(ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয়করণ: তত্ত্ব ও প্রয়োগ)
আরো পড়ুন: ওয়াকফ: প্রয়োজন নতুন আন্দোলন