ইসলামী অর্থনীতি ও তার সমসাময়িকতা

মানব জীবনে অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামী অর্থনীতি ও তার সমসাময়িকতা। বর্তমান যুগে অর্থনৈতিক সমস্যাকেই সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উপর ইসলামী দাওয়াতের অগ্রগতি নির্ভরশীল।

কেননা দারিদ্র্য জর্জরিত জনগণ ইসলামের দাওয়াত বোঝার অবকাশই পায় না । এ জন্য ইসলামী অর্থনীতির মূলনীতিগুলো নির্ধারণ এবং সে আলোকে বিশদ বিধান (Laws and regulations) তৈরি করা বিশেষ জরুরি।

নব্য স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক বিকাশ যেন ইসলামের আলোকে হতে পারে, সে জন্য ইসলামী অর্থনীতিবিদ ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের প্রশাসকদের বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।

ইসলামী অর্থনীতি ও তার সমসাময়িকতা

এ গুরুত্বপূর্ণ কাজে কিছু মনীষী ও সংস্থা গত দুই দশকে অনেক মূল্যবান কাজ করেছেন। সংস্থাসমূহের মধ্যে আমেরিকার Association of Muslim Social Scientists, International Centre for Islamic Economics, Jeddah-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়।

বাংলাদেশে Bangladesh Islamic Bankers Association Islamic Economic Research Bureau বেসরকারি পর্যায়ে কিছু কাজ করছে। ইসলামী অর্থনীতি ও তার সমসাময়িকতা

এ প্রসঙ্গে ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কে সাধারণভাবে যেসব ভুল ধারণা রয়েছে তা দূর করা দরকার । অনেকের ধারণা, ইসলামী অর্থনীতি মানে চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে আরব দেশে যে অর্থব্যবস্থা চালু ছিল তার পুনরুজ্জীবন করা। কিন্তু এ ধারণা মোটেই সঠিক নয়। ইসলামী অর্থনীতি ও তার সমসাময়িকতা

যারা ইসলামী অর্থনীতি কায়েম করতে চান, তারা কোনো বিগত দিনের অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চান না। বর্তমান সময়ে ইসলামী অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হলে তা আধুনিকই হবে এবং সে ব্যবস্থায় আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি, প্রযুক্তি বিদ্যা (Technology) ও সংগঠনের (Methods of organization) নিয়মই অবলম্বন করা যাবে।

এ কথা মনে করা ভুল হবে যে, উৎপাদন ও সংগঠন পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি বিদ্যা কোনো বিশেষ আদর্শের উপযোগী। প্রকৃতপক্ষে যে কোনো অর্থনীতিতেই এসব উদ্ভাবন ও পদ্ধতিকে সমভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আদর্শিক অর্থব্যবস্থা বলতে কি বোঝায় বা ইসলামী অর্থনীতি বলতে আমরা কি বুঝতে চাই তাও পরিষ্কার করা দরকার।

অনেকে বলে থাকেন, ইসলামের কোনো অর্থব্যবস্থা নেই এবং একটি চিরন্তন নৈতিক আদর্শ হিসেবে ইসলামী অর্থব্যবস্থা থাকাও উচিত নয়। যদি ব্যবস্থা (System) বলতে অর্থনীতির প্রতিটি দিকের বিস্তারিত ও নির্দিষ্ট নিয়মাবলী বোঝানো হয় তাহলে অবশ্য বলা যেতে পারে যে, ইসলামে কোনো অর্থব্যবস্থা নেই।

কিন্তু ব্যবস্থা (System) বলতে কতকগুলো মূলনীতি ও মূল্যবোধও বোঝানো যেতে পারে যা একটিকে অন্যটি হতে পৃথক করে থাকে । মূলনীতি বা মূল্যবোধের দৃষ্টিতেই অর্থনৈতিক অবাধ স্বাধীনতাকে (Laissez- faire) পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে এবং সামাজিক মালিকানাকে সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য মনে করা হয়েছে।

ইসলামে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ থেকে অনেক বেশি বিস্তারিত অর্থনৈতিক নিয়মাবলী রয়েছে। কাজেই ইসলামী অর্থব্যবস্থা থাকতে পারে না বলা অত্যন্ত অযৌক্তিক। ইসলামী অর্থনীতির ইসলামিত্ব (Islamicness) হচ্ছে তার মূল্যবোধ এবং তার প্রয়োগনীতিতে। ইসলামী অর্থনীতি ও তার সমসাময়িকতা

ইসলামী অর্থনীতি ও তার সমসাময়িকতা
ইসলামী অর্থনীতি ও তার সমসাময়িকতা

অর্থনীতি বিষয়ে কয়েকটি প্রধান ইসলামী মূলনীতি হচ্ছে সুদ নিষিদ্ধকরণ, সম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি, দুস্থদের জন্য সামাজিক ব্যবস্থা (যাকাত), ব্যবসা ও জীবিকা অনুসন্ধানের অধিকার, অর্থ ও সম্পদ জমাকরণের (Concentration) বিরুদ্ধে শক্ত মনোভাব, ইসলামের মিরাসি ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির প্রতিরোধ (আমরু বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার)।

আমরা পরে দেখতে পাব যে, ইসলামী রাষ্ট্র নাহি আনিল মুনকার (দুর্নীতির প্রতিরোধ)-এর ক্ষমতা প্রয়োগ করে সমকালীন সব অর্থনৈতিক জুলুম ও অনাচার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

এ প্রসঙ্গে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। অনেকে মনে করেন যে কোনো সমস্যার কেবল একটিই ইসলামী সমাধান হতে পারে। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন ইসলামী রাষ্ট্র একই সমস্যাকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সমাধান করতে পারে।

কোনো লেখকের পক্ষে ইসলামী অর্থনীতির বিশদ বিধান (details) রচনা করে সেটিকে একমাত্র মডেল বা চূড়ান্ত মনে করা নিঃসন্দেহে অযৌক্তিক দাবি। কেননা কুরআন ও সুন্নাহর মূল পাঠ (text) থেকে পাওয়া বিধানের অতিরিক্ত বিশদ বিধান তৈরি করার জন্য লেখকরা যে ইজতিহাদ করবেন তাতে ব্যাপক মতপার্থক্য হতে পারে।

সুতরাং গত হাজার বছরের অর্থনৈতিক বিবর্তন ও বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদেরকে ইসলামী অর্থনীতির বিশদ মডেল তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্যের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

যেসব ক্ষেত্রে এসব মতপার্থক্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেশি তার মধ্যে ভূমি সংস্কার, অর্থনীতিতে সরকারি ভূমিকা, সুদবিহীন অর্থনীতির সঠিক মডেলের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

ইসলামী চিন্তাবিদদের এসব মতপার্থক্য সম্বন্ধে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য ঐক্যের গুরুত্ব লাঘব করা নয়। তবে ঐক্য ও সমঝোতা কেবল পরেই বিতর্কের মধ্যে আসতে পারে, পূর্বে নয়। ইসলামী অর্থনীতি ও তার সমসাময়িকতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.