জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অনুযায়ী যেসকল শিক্ষক ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সরাসরি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবেন তাদের জন্য মাউশি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করেছেন।
পূর্ববর্তী ঘোষনা অনুযায়ী ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের বিষয় ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ ১ম পর্ব ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ এবং দ্বিতীয় পর্ব ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে আমরা বিজ্ঞান বিষয়ভিত্তিক জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অনলাইন প্রশিক্ষণ NCF Science New Training নিয়ে জেনেছি।
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকগণ মুক্তপাঠে লগইন করে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
নিচের বাটনে ক্লিক করে মুক্তপাঠের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এ যোগ দেওয়া যাবে।
বিষয় ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পার্ট-১
মুক্তপাঠে ভিডিওটি দেখতে সমস্যা হলে নিচে বিষয় ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এর আলোচনাটি দেখে নিতে পারেন।
সবাই তো জানি, বর্তমান বিশ্ব মানব সভ্যতার জন্য বেশ কয়েকটি বড় বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। একদিকে যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কোভিড-১৯ এর মত অতিমারি তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে প্রযুক্তির যে অভিনব ও দ্রুত উন্নয়ন ঘটছে তার ফলে মানুষের সামনে একই সাথে তৈরি হচ্ছে সীমাহীন সম্ভাবনা ও অপরিসীম ঝুঁকি।
পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত এই পরিবর্তন এত দ্রুত ঘটছে যে মানুষের পক্ষে তার আগের সক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে এই পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সকল প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশকেই বদলে দিচ্ছে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় প্রযুক্তির পরিবর্তনের কারনে উৎপাদন ব্যবস্থায় এখন রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে প্রচুর শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে আবার একই সাথে যারা এসব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করছে তাদের জন্য সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কাজের সুযোগ।
এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা যার সরাসরি প্রভাব পরছে মানুষের জীবনে। মানুষের এখন আর তাই পুরোনো সক্ষমতা বা যোগ্যতা নিয়ে বসে থাকলে চলছে না। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে হলে প্রয়োজন হয়ে পড়ছে পুরোনো ধ্যান-ধারণা আর যোগ্যতা কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে সময়োপযোগী যোগ্যতা অর্জন করে পরিবর্তনশীলতার সাথে খাপ খাইয়ে দেশপ্রেম সম্পন্ন যোগ্য বিশ্বনাগরিক হিসেবে বিকশিত হওয়া।

একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন বিশ্বনাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যেই প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
যোগ্যতাভিত্তিক এ শিক্ষক্রমে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য ৮টি যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে সযোগিতা করা, উপযুক্ত শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষকদের কার্যক্রমে সহায়িকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
এই শিক্ষাক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন কৌশলকে গুরত্ব প্রদান। কাজেই এ শিক্ষাক্রম অনুসারে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতাগুলো অর্জনে শিক্ষক কী ভাবে সহযোগিতা দেবেন এবং সামগ্রিকভাবে একটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হবেন সে বিষয়ে যতটা সম্ভব বিস্তারিতভাবে আলোচনা দিক নির্দেশনা দেবার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ধারণায়ন

ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একবিংশ শতাব্দীর একজন বিশ্বনাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক যোগ্যতা সৃষ্টি হবে।
এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবার যোগ্যতা অর্জন করবে।
প্রকৃতিতে ও সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা পরিবর্তনের কার্যকারণ ও প্রভাব অনুসন্ধান করতে পারবে। যৌক্তিক অনুসন্ধান পদ্ধতির প্রাথমিক ধারণা কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে অনুসন্ধানের যোগ্যতা অর্জন করবে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জেনে সচেতন নাগরিক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের মূলনীতির আলোকে সামাজিক ন্যায়বিচার নীতি ধারণ করে সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারবে।

ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়টি ক্রস-কাটিং ইস্যু হিসেবে রূপরেখায় নির্ধারিত দশটি মূল শিখনক্ষেত্রের সবগুলোরই নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জনে ভূমিকা রাখলেও, এতে মূলত সমাজ ও বিশ্বনাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু এবং জীবন ও জীবিকা শিখন-ক্ষেত্রগুলো অধিক গুরুত্ব পেয়েছে।
এর সাথে বাংলা, ইংরেজি, ডিজিটাল টেকনোলজি, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়গুলো থেকে অর্জিত যোগ্যতা ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
যোগ্যতাগুলো সাজানোর সময় আন্তঃবিষয়ক সমন্বয় নিশ্চিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও এসকল শিখন-ক্ষেত্রের যোগ্যতাসমূহ ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।
সামাজিক বিজ্ঞানের বৃহত্তর পরিসরে যে সকল বিষয় (যেমন : ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি) অধ্যয়ন করা হয় সেগুলোর মূল বিষয়বস্তুসমূহ বিশ্লেষণ করে আত্মপরিচয়, প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো, পরিবর্তনশীলতায় ভূমিকা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা- এই চারটি মূল ডাইমেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই চারটি ডাইমেনশনকে ভিত্তি করেই বিষয়ের ধারণায়ন করা হয়েছে।
সামাজিক বিজ্ঞানের যোগ্যতাসমূহ নির্ধারণ করার জন্য যে চারটি ডাইমেনশন বিবেচনায় নেয়া হয়েছে তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হয়েছে :
আত্মপরিচয়
ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিজের পরিচয় নির্মাণ করা সামাজিক বিজ্ঞানের একটি মূল প্রতিপাদ্য হওয়ায় সকল বিষয়কে সমন্বিতভাবে আয়ত্ত করার জন্য একে একটি ডাইমেনশন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো (ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান)
প্রাকৃতিক সামাজিক বিজ্ঞানের সকল বিষয়েরই কেন্দ্রীয় একটি বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাঠামোর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের যোগ্যতা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাই কাঠামোকে একটি ডাইমেনশন হিসেবে ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, প্রাকৃতিক কাঠামো বলতে সাধারণত প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান ও ব্যবস্থা যেমন: নদী, সাগর, মহাসাগর, পর্বতমালা, মহাদেশ প্রভৃতিকে বোঝানো হয়ে থাকে। অন্য দিকে, সামাজিক কাঠামো বলতে সাধারণত পরিবার, ধর্ম, রীতিনীতি, সংস্কৃতি,গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিকে বোঝানো হয়।
পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা
প্রাকৃতিক ও সামাজিক কাঠামো পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীলতার বস্তুনিষ্ঠ প্যাটার্ন অনুসন্ধান করা সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য বিষয়।
যে কোন পরিবর্তনের ফলেই কিছু সম্ভাবনা ও ঝুঁকি তৈরি হয়। এই ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে যথাযথ ইতিবাচক ভূমিকা নির্ধারণের যোগ্যতা অর্জন সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এ বিবেচনায় পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা নির্ধারণকে সামাজিক বিজ্ঞানের যোগ্যতা নির্ধারণের একটি ডাইমেনশন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ
উন্নয়নের জন্য সম্পদ একটি অপরিহার্য বিষয়। প্রকৃতির সম্পদ সীমিত। প্রকৃতিকে ব্যবহার করে সম্পদের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ ও সংরক্ষণ অর্থাৎ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণকে তাই সামাজিক বিজ্ঞানের একটি ডাইমেনশন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিচের শিখনক্রমের শুরুতে শ্রেণিভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী এবং তার নিচে শিখন যোগ্যতাসমূহ বিবৃত হয়েছে। শিখনক্রমের অনেক ক্ষেত্রে একই শিখন যোগ্যতা একাধিক শ্রেণিতে বিবৃত হয়েছে। এসকল ক্ষেত্রে শিখন অভিজ্ঞতার ধরন এবং বিষয়বস্তুর গভীরতা ও কাঠিন্য ব্যবহার করে শ্রেণিভিত্তিক বিস্তৃতি নির্ধারণ করতে হবে।
যোগ্যতার ধারণা
যোগ্যতা অর্জনকে কেন্দ্র করে নতুন শিক্ষাক্রমে সবকিছুকে সাজান হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যোগ্যতার একটি সাধারণ সংজ্ঞা এতে ধারণ করা হয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায়, জ্ঞান, দক্ষতা এবং ইতিবাচক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সমন্বিতভাবে অর্জিত হলে শিক্ষার্থীর মাঝে যোগ্যতা গড়ে উঠে।
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বিবেচনায় এই শিক্ষাক্রমে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার উৎস হিসেবে যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতাকেই নতুন শিক্ষাক্রমে যোগ্যতা হিসেবে ধারণায়ন করা হয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কোন একজন শিক্ষার্থী যখন বই পড়ে গণতন্ত্র কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি তা জানতে পারে, তবে তার জ্ঞান অর্জিত হয়। যদি এই জ্ঞান প্রয়োগ করে কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যাখা করতে পারে, তবে তার দক্ষতা অর্জিত হয়।
কিন্তু যখন সে গণতন্ত্র সম্পর্কে সব তথ্য জানে, সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতন্ত্রের চর্চার ধরণ ব্যাখ্যা করতে পারে এবং নিজের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্য অর্জন করে তখন তার গণতন্ত্র বিষয়ক যোগ্যতা অর্জিত হয়।
বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার বিবরণী
সার্বিকভাবে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়টি প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত অধ্যয়ন শেষে একজন শিশু যে যোগ্যতা অর্জন করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে তাই হচ্ছে বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা। এ শিক্ষাক্রমে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য যে বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিম্নলিখিতভাবে-
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্বে নিজের অবস্থান, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ও কাঠামো পর্যালোচনা করে পরিবর্তনশীলতায় ইতিবাচক ভূমিকা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা অনুশীলন করে একটি উন্নত, নিরাপদ ও টেকসই বাংলাদেশ ও বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বনাগরিক হিসাবে ভূমিকা রাখতে পারা।
অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন-শেখানো কৌশল
শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা অর্জনকে নিশ্চিত করার জন্য এই শিক্ষাক্রমে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন-শেখানো কৌশলকে অন্যতম একটি পদ্ধতি হিসেবে নেয়া হয়েছে। এই কৌশল অনুসারে মূলত শিক্ষার্থীরা সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে নিজের শিখনের দায়িত্ব নিজে পালন করার মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জন করে।
শিক্ষক শুধু তাকে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে ও সহায়তা করে তার দায়িত্ব পালন করেন। এই কৌশল অনুসারে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের যোগ্যতা অর্জনের জন্য শিক্ষক প্রথমে এই শিক্ষক সহায়িকা অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের কোনো বিষয়কে নিয়ে প্রশ্ন বা সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য উপায় অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত ফলাফল প্রয়োগের অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করা যায়।
এই পদ্ধতিতে আরো যে প্রক্রিয়াগুলোর চর্চার সুযোগ রাখা হয়েছে সেগুলো হল: আনন্দময় শিখন, পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের সমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে ও কাজভিত্তিক বা হাতে কলমে শিখন, প্রজেক্টভিত্তিক, সমস্যাভিত্তিক এবং চ্যালেঞ্জভিত্তিক শিখন, সহযোগিতামূলক শিখন, অনুসন্ধানভিত্তিক শিখন, একক, জোড়া এবং দলগত কাজসহ স্ব-প্রণোদিত শিখনের সংমিশ্রণ, বিষয়নির্ভর না হয়ে প্রক্রিয়া এবং প্রেক্ষাপটনির্ভর শিখন, অনলাইন শিখনের ব্যবহার ইত্যাদি।

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনকে বোঝানোর জন্য সাধারণভাবে একটি চক্রাকার ছককে ব্যবহার করা হয়। যেখানে চারটি মূল ধাপ অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের শিখন নিশ্চিত হয়।
১. বাস্তব অভিজ্ঞতা: এই ধাপে শিক্ষার্থী বিষয়ভিত্তিক তার বাস্তব জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবে।
২. প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণ: এরপর তারা পর্যবেক্ষণ, আলোচনা, অনুসন্ধান, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে আগের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করবে।
৩. বিমূর্ত ধারণায়ন: এই ধাপে শিক্ষার্থীরা কোন একটি সাধারণ ধারণায় বা নিজস্ব ব্যাখ্যায় উপনীত হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন রিসোর্স এর সহযোগিতা নেবে।
৪. সক্রিয় পরীক্ষণ/প্রয়োগ: অর্জিত ধারণা অন্য কোন অভিজ্ঞতায় বা পরিস্থিতিতে ব্যবহার করবে।
শিক্ষকের ভূমিকা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা শিক্ষকদের। কেবল এতদিনের অভ্যস্ত ভূমিকা একটু বদলে নিতে হবে। আপনারা হলেন এই পদ্ধতির অগ্রপথিক বা অগ্রযাত্রী, শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়কের দায়িত্ব পালন করবেন। শুধু মনে রাখতে হবে ওদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সুযোগ যেন কোনোভাবে নষ্ট না হয়।
শিক্ষক অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন কৌশলের ধাপ অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারে তার সহায়তা দেবেন মাত্র। ওদের পথ খুঁজে না পাওয়া দেখে বা কাজের সময় বাঁচানোর বিবেচনা থেকে বা অন্য নানাকারণে আগেই বা মাঝপথে আপনার পক্ষে অভ্যাসবশত কি করতে হবে তা শিক্ষার্থীদের বলে দেওয়ার ইচ্ছা দমানো মুশকিল হতে পারে। কিন্তু তা দমিয়ে রাখতেই হবে।
মনে রাখতে হবে সঠিক উত্তর নয় শেখার প্রক্রিয়া শেখাটাই মূল ব্যাপার। শিশুরা নিজেরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে ৮টি যোগ্যতা অর্জন করবে। তারা কোন তথ্য বা বিষয়বস্তু যতটা শিখবে তার চেয়ে বেশি শিখবে ঐ বিষয়টা কিভাবে শিখতে হয় তার প্রক্রিয়া-How to learn৷ কাজেই এখানে পারা বা না পারার বিষয়টা ভিন্নভাবে বুঝতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে যেন সে প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করতে পারছে কিনা। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার কিছু মৌলিক ধারণা বাদে ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের কোন প্রশ্নেরই একমাত্র আদর্শ উত্তর বা সমাধান নেই।
আপনারা প্রয়োজনে তাদের কিছু কিছু ইশারা দেবেন, চিন্তার খোরাক যোগাবেন যেমনটা চলার পথে গাড়ি থেমে গেলে অভিজ্ঞ মানুষের সহযোগিতা নিতে হয়। ওরা জ্ঞানাভিযানে চলতে শুরু করলে আপনার কাজ হবে নজর রাখা, পর্যবেক্ষণ করা, প্রয়োজনে সহায়তা করা, কিন্তু অপ্রয়োজনে নয়। তারপর আছে মূল্যায়নের কাজ। এ নিয়েও আমরা আলোচনা করবো।
আপনারা তো জানেনই প্রত্যেক শিশুই কেবল স্বতন্ত্র মানুষ নয়, স্বকীয় মানুষও। এই স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা মূল্যবান। ফলে ওদের ব্যক্তি পরিচয়হীন একটা দল/শ্রেণি ভাবা ঠিক হবে না, ওদের প্রত্যেকেরই নিজ গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে স্বতন্ত্র পরিচয় আছে।
সেটার সাথে শিক্ষকের নিবিড় পরিচয় ঘটা জরুরি, তাতে প্রত্যেকের যোগ্যতার বিকাশ এবং প্রত্যেকের জন্যে যথার্থ ন্যায্য পরিবেশ সৃষ্টি সহজ হয়। সেই সাথে মূল্যয়নও ঠিকভাবে করা সহজ হয়ে যাবে।
শিখন-শেখানো সামগ্রির ব্যবহার
এই শিক্ষাক্রমে যোগ্যতা অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন-শেখানো কৌশলসহ অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। কাজেই শিখন-শেখানো সামগ্রি অর্থাৎ এই শিক্ষকদের সহায়িকা, পাঠ্য পুস্তক এবং অন্যান্য সামগ্রীও এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যেন শিক্ষার্থীদের জন্য কাঙ্ক্ষিত শিখন অভিজ্ঞতা অর্জিত হতে পারে ।
এই সহায়িকাতে প্রতিটি যোগ্যতা অর্জনের জন্য কী ধরণের শিখন অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হতে পারে তা বিবেচনা করে শিক্ষকদের সহায়তার জন্য বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি যোগ্যতার শিখন অভিজ্ঞতাকে আবার প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সংখ্যক সেশনে বিভক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে।
একেকটি সেশন একেক দিন পরিচালিত হবে ধরে নিয়ে শিক্ষক সহায়িকাটি সাজানো হয়েছে। প্রত্যেকটি যোগ্যতার জন্য নির্ধরিত শিখন অভিজ্ঞতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে আপনারা প্রাসঙ্গিক যেসকল তথ্য জানার প্রয়োজন বোধ করতে পারেন সেরকম কিছু প্রাষঙ্গিক তথ্য এই সহায়িকার পরিশষ্টতে সংযুক্ত পাবেন।
অবশ্যই সেসব তথ্যই সব চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনারা যদি প্রাসঙ্গিক ধারণা ও তথ্য জানার জন্য বিভিন্ন বই, পত্র-পত্রিকা এবং ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করেন তাহলে সমৃদ্ধ হবেন। শিক্ষার্থীদেরও উৎসাহিত করবেন পাঠ্যপুস্তকের বাইরে নির্ভরযোগ্য অন্যান্য উৎস যেমন বিভিন্ন বই, পত্র-পত্রিকা এবং ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করার জন্য।
তাছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণয়নকৃত পাঠ্যপুস্তকও শিক্ষক সহায়িকার মত একইভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে তাদের বয়োসপোযোগী ভাষা ও ঢং এ। পাঠ্যপুস্তকও আপনাদের শিখন অভিজ্ঞতাগুলোর জন্য পরিকল্পনা ও করণীয় বুঝতে সহায়তা করবে। আপনারা অবশ্যই সেশন পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নেবার সময় শিক্ষক সহায়িকার সাথে সাথে পাঠ্যপুস্তকে শিখন অভিজ্ঞতার একই অংশ পড়ে নেবেন।
এই শিক্ষাক্রমের আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আন্তঃবিষয়ক সমন্বয়, অর্থাৎ ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের যোগ্যতা অর্জন করার সময় কখনও কখনও অন্যান্য বিষয়ের অর্জিত যোগ্যতা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আবার কখনও এই বিষয়ের যোগ্যতা অন্য বিষয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়ে যাবে বা এই বিষয়ের মাধ্যমে অন্য বিষয়ের যোগ্যতার।
বিষয়ের ধারণায়নে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন বিষয়টি যে, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়টি সব বিষয়ের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত হলেও, মূলত সমাজ ও বিশ্বনাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু এবং জীবন ও জীবিকা শিখন-ক্ষেত্রগুলো অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। এর সাথে বাংলা, ইংরেজি, ডিজিটাল টেকনোলজি, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়গুলো থেকে অর্জিত যোগ্যতা ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
যোগ্যতাগুলো সাজানোর সময় এক বিষয়ের সাথে অন্য বিষয়ের মাঝে এই সম্পর্কগুলোর সমন্বয় নিশ্চিত করা হয়েছে। কাজেই আপনারা অবশ্যই আন্তঃসম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোর যোগ্যতাগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়ের শিক্ষকদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে শিখন অভিজ্ঞতাগুলো বাস্তবয়নের পরিকল্পনা করবেন।
ধরা যাক, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের যোগত্যা ইসাবি ৬.৪ এ আমাদের এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ প্রকল্পটি উপস্থাপনার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে কেউ যদি নাটক, দেয়াল পত্রিকা, গান, নাচ, গল্প বা তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে চায় তাহলে তাদের ডিজিটাল টেকনোলজি এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয় থেকে অর্জিত এসব যোগ্যতা ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে এই তিন বিষয়ের শিক্ষকদের মাঝেও সমন্বিত পরিকল্পনা থাকতে হবে।
এই সব শিখন সামগ্রীই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য নির্ধারিত ৮টি যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য শিখন অভিজ্ঞতার পরিকল্পনার উদাহরণ। আপনারা এগুলো ব্যবহার করবেন। কিন্তু এগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। ধীরে ধীরে ধারাণা পরিস্কার হলে আপনারাও নতুন নতুন প্রাসঙ্গিক শিখন অভিজ্ঞতার পরিকল্পনা সাজাবেন। এভাবেই এক সময় আপনারা হয়ে উঠবেন আগামী দিনের মানুষ গড়ার দক্ষ কারিগর।
শিখন মূল্যায়ন করা হবে কেমন করে?
নতুন শিক্ষাক্রমের মূল লক্ষ্যই যেহেতু শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করা তাই এতে শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের পরিবর্তে শিখনের মূল্যায়নে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর তাই মূল্যায়নের অন্যতম কৌশল হিসেবে নেয়া হয়েছে শিখনকালীন মূল্যায়ন।
অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যখন যেখানেই শিখন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবে তখনই তাকে পর্যবেক্ষণ, হাতে কলমের কাজ, রুব্রিক্স প্রভৃতির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে যে তাদের শিখন হয়েছে কিনা বা কোথায় কোথায় শিক্ষার্থীকে আরো চেষ্টা করতে হবে তা নির্ণয় করা হবে। মূল্যায়নে কোন নম্বর ব্যবহার করা হবে না।
বরং একজন শিক্ষার্থীর শিখন কতটুকু হলো তা বর্ণনামূলকভাবে চিহ্নিত করা হবে। শিক্ষকদের জন্য আগে থেকেই তৈরি করা রুব্রিক্স প্রতিটি শিখন অভিজ্ঞতার সাথে সংযুক্ত আছে। কাজেই আপনাদের কোন বিস্তারিত বর্ণনা লিখতে হবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু রুব্রিক্স এর নির্দিষ্ট স্থানে টিক চিহ্ন দিয়ে মূল্যায়ন করা যাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করে তার নোট আপনাদের লিখে শিক্ষার্থীদের ফাইলে সংরক্ষণ করতে হবে।
এই মূল্যায়ন করার পর শিক্ষার্থী সম্পর্কে আপনারা যা জানতে পারবেন তা দিয়ে কী করবেন?
শিক্ষার্থীদের শিখনের যে তথ্য পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী অবশ্যই যে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি রয়েছে বা যোগ্যতা অর্জিত হয় নি তাদের শিখন নিশ্চিত করার জন্য পুনরায় শিখন অভিজ্ঞতার আয়োজন করবেন। প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিত করতে হবে।
এজন্য প্রতিটি যোগ্যাতার জন্য নির্ধারিত সেশনের শেষে একটি সেশন অতিরিক্ত রাখা হয়েছে শিখন ঘাটতি দূর করতে ব্যবহার করার জন্য। শিক্ষকদের পাশাপাশি আত্ম মূল্যায়ন, সতীর্থ মূল্যায়ন, অভিভাবক কর্তৃক মূল্যায়ন ও কমিউনিটি মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রতিটি শিখন অভিজ্ঞতার সাথে প্রযোজ্য স্থানে মূল্যায়ন নির্দেশনা ও মূল্যায়নের জন্য রুব্রিক্স সংযুক্ত আছে। নির্ধারিত সেশনে যাবার আগে শিক্ষকগণ মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক রুব্রিক্স এর কপি শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যাবেন এবং ব্যবহার করবেন। পরিবার ও কমিউনিটির জন্য নির্ধারিত রুব্রিক্স আপনি সেশনের আগেই পৌছে দেবেন যাতে উপযুক্ত সময়ে তারা ব্যবহার করতে পারে।
মূল্যায়নে শিক্ষকের করনীয়
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দুই ভাবে মূল্যায়ন করবে। প্রতিটি শিখন অভিজ্ঞতার সাথে সাথে চলবে “শিখনকালীন মূল্যায়ন” যার মূল উদ্দেশ্য থাকবে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত ফিডব্যাক দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোতে সাহায্য করা।
আরেকটি হল সামষ্টিক মূল্যায়ন, যার মূল উদ্দেশ্য হল এই শ্রেণির এই বিষয়ের জন্য নির্ধারিত সকল যোগ্যতা গুলো শিক্ষার্থী অর্জন করলো কিনা তার সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা। এই সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৬ মাস এবং ১২ মাস পর। তবে কিছু কিছু শিখনকালীন মূল্যায়ন কার্যক্রমের ফলাফল এই সামষ্টিক মূল্যায়নে যোগ হবে (কাজেই তার রেকর্ড রাখতে হবে)।
কোন মূল্যায়ন কার্যক্রম কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে এবং কিভাবে তার রেকর্ড সংসরক্ষন করতে হবে (ছক, বা চেক্লিস্ট, বা রুব্রিক্স ব্যবহার করে) তা শিক্ষক সহায়িকায় উল্লেখ আছে। প্রতি শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন কার্যক্রমে পারদর্শিতা নির্দিষ্ট “পারদর্শিতার নির্দেশক” অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হবে। এই শ্রেণির এই বিষয়ের জন্য মোট ১২ টি পারদর্শিতার নির্দেশক নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই নির্দেশক গুলো মূল যে ৮টি একক যোগ্যতা রয়েছে সেগুলোকে পরিমাপ করবে। একেকটি একক যোগ্যতা অর্জনে শিক্ষার্থীকে এক বা একাধিক পারদর্শিতার নির্দেশক অর্জন করতে হয়। প্রতিটি নির্দেশকের জন্য তিনটি স্তর দেয়া আছে- প্রারম্ভিক, বিকাশমান, এবং দক্ষ। শিক্ষার্থী প্রতিটি নির্দেশকে এই তিনটি স্তরের যেকোনো একটি স্তর অর্জন করবে।
বিভিন্ন মূল্য্যন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষক প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য এই ১২ টি পারদর্শিতার নির্দেশকের জন্য প্রারম্ভিক, বিকাশমান, বা দক্ষ যেকোনো একটি স্তর নির্ধারণ করবেন। কি ধরনের বোধগম্যতা, আচরণ, বা পরিবর্তন কোন ধরনের স্তর নির্দেশ করে তা দেয়া আছে- অর্থাৎ প্রতি নির্দেশকের জন্য তিনটি করে স্তরের বর্ণনা দেয়া আছে।
বিষয় ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান (পার্ট-২)
ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান (পার্ট-২)- বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ সকাল ১০ টায় শুরু হবে। নিচের ভিতিওতে সরাসরি এই সংক্রান্ত আলোচনা শুনতে পাবেন।
সকল বিষয়ের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণগুলো দেখুন
বিষয়ের নাম | কোর্স শুরুর তারিখ ও সময় | অংশগ্রহণ পদ্ধতি |
---|---|---|
বাংলা | ২৪/১২/২০২২, সকাল ০৯:০০ | http://ibankhub.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%85%e0%a6%a8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%87/ |
ইসলাম ধর্ম | ২৪/১২/২০২২, সকাল ০৯:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/980 |
ইংরেজি | ২৪/১২/২০২২, সকাল ১০:০০ | http://ibankhub.com/%e0%a6%87%e0%a6%82%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%9c%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%85%e0%a6%a8%e0%a6%b2%e0%a6%be/ |
স্বাস্থ্য সুরক্ষা | ৪/১২/২০২২, সকাল ১০:০০ | http://ibankhub.com/%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ad/ |
গণিত | ২৪/১২/২০২২, সকাল ১১:০০ | http://ibankhub.com/%e0%a6%97%e0%a6%a3%e0%a6%bf%e0%a6%a4-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%85%e0%a6%a8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%a8/ |
শিল্প ও সংস্কৃতি | ২৪/১২/২০২২, সকাল ১১:০০ | http://ibankhub.com/%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%93-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ad%e0%a6%bf/ |
হিন্দু ধর্ম | ২৪/১২/২০২২, দুপুর ১২:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/972 |
বৌদ্ধ ধর্ম | ২৪/১২/২০২২, দুপুর ১২:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/971 |
খ্রিস্ট ধর্ম | ২৪/১২/২০২২, দুপুর ১২:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/968 |
জীবন ও জীবিকা (১ম অংশ) | ২৪/১২/২০২২, বিকাল ০৩:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/965 |
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (১ম অংশ) | ২৪/১২/২০২২, বিকাল ০৪:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/962 |
বিজ্ঞান | ২৫/১২/২০২২, সকাল ০৯:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/959 |
ডিজিটাল টেকনোলজি | ২৫/১২/২০২২, সকাল ০৯:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/990 |
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (২য় অংশ) | ২৫/১২/২০২২, সকাল ১০:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/962 |
জীবন ও জীবিকা (২য় অংশ) | ২৫/১২/২০২২, সকাল ১১:০০ | https://muktopaath.gov.bd/course-details/965 |
2 Comments
উপস্থাপন ভালো লেগেছে।
Pingback: গণিত বিষয়ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা 2021 Free Math Training - iBankHub